শরীয়তপুর থেকে : শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ তারা গ্রামের শ্বশুর বাড়ি থেকে আমেনা বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধূর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। সে সময় মাদকাসক্ত স্বামী নজরুল ইসলাম মাতবরকে (৪২) আটক করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পারিবারিক কলহের জের ধরে নির্মমভাবে ওই গৃহবধুকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মৃত আমেনা বেগম একই ইউনিয়নের গঙ্গাসকাঠি গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ মাতবরের মেয়ে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর আগে পারিবারিকভাবে আমেনার সঙ্গে বিয়ে হয় সৌদি প্রবাসী নজরুল ইসলাম মাতবরের। বিদেশে থাকাকালীন নজরুল স্ত্রী আমেনা বেগমকে সন্দেহের চোখে দেখতেন।
গেল ১ বছর আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন নজরুল। এসব বিষয় নিয়ে প্রায়ই তাদের পরিবারে বনিবনা না হওয়ায় কলহ চলে আসছিল। প্রায় সময়ই তাদের দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া লেগেই থাকতো। বেশ কয়েকবার রাগ অভিমান করে সংসার করবে না এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে বাবার বাড়ি চলেও গিয়েছিল আমেনা বেগম। সালিশ মিমাংসায় সংসার করতে থাকলেও গত একমাস ধরে দুইজনের মধ্যে বিরোধের পরিমাণটা বেড়ে যায়।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে দুইজনের মধ্যে আবারও কথা কাটাকাটি হয়। পরে দুপুরে ঝগড়ার এক পর্যায়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে নজরুল আমেনাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর নজরুল ফেসবুক লাইভে আসেন। লাইভে তার স্ত্রী আমেনা বেগমকে খাটের ওপর তোশক দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় দেখান। এক পর্যায়ে তাকে গাইতে শোনা যায়, 'আমার খাইয়া, আমার পইরা ডুব দিছে ভাই অন্য জনরে।'
লাইভ দেখার পর বিষয়টি জানাজানি হলে নজরুল ইসলামের মা আনার কলি, ভাগনি সোহাদি আক্তার, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী আছিয়া বেগমসহ প্রতিবেশীরা দরজা পেটাতে থাকেন। কিন্তু নজরুল ইসলাম দরজা খোলেননি। পরে ঘরের দরজা বন্ধ করে নিহত স্ত্রীর লাশ জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এমন ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে জড়ো হয়ে নজরুলের বাড়ি ঘিরে রাখে। খবর পেয়ে ডামুড্যা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় নজরুলকে গ্রেপ্তার করে থানা হাজতে পাঠিয়ে দেন।
ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা আমেনার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় ডামুড্যা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এদিকে, আমেনা খুন হওয়ার পরে আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনদের আহাজারি ও কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। খুনি স্বামী নজরুলের ফাঁসি দাবি করেছেন স্বজনরা। শরীয়তপুর পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান জানান, স্ত্রী আমেনাকে হত্যার অভিযোগে স্বামী নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।