 
                                        
                                        
                                       
                                        
                                             
                                                                                    
শরীয়তপুর : কৃষক বাবার ডানপিটে ছেলে নজরুলের ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় মন না থাকলেও ব্যবসার প্রতি ছিল ব্যাপক ঝোঁক ছিল। মাত্র দুই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে চায়ের দোকান শুরু করেন। এই চায়ের দোকানই বদলে দিয়েছে তার অবস্থা।
এখন প্রতিদিন ৭ ঘণ্টায় বিক্রি করেন ৮০ থেকে ১০০ কেজি দুধের চা। এতে তার দৈনিক আয় হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। সম্প্রতি শরীয়তপুর সদরের আংগারিয়া বাইপাস সংলগ্ন ‘হাইওয়ে চায়ের আড্ডা’ দোকানের মালিক কাজী নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের হাজতখোলা গ্রামের নুরুজ্জামান কাজী ও আছমা বেগম দম্পত্তির ছেলে কাজী নজরুল ইসলামের এমন সফলতা দেখে এলাকার বেকার যুবকরা যেকোনো ছোট কাজেও মনোনিবেশ করে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
জানা যায়, ছোটবেলা থেকে ডানপিটে ছিলেন নজরুল ইসলাম। পড়াশোনায় মন না থাকায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে নজরুল প্রথমে রেফ্রিজেটর মেকানিক হিসেবে কাজ শুরু করলেও তেমন উন্নতি করতে পারেননি।
পরে মামার পরামর্শে প্রায় ৭ বছর আগে আংগারিয়া বাইপাসে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকে দুই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাত্র দুই কেজি দুধের চা বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন নজরুল। ব্যবসার টাকা থেকে পুঁজি বাড়িয়ে এখন তার দোকানে দুধ চা, দই চা, বাদাম চা, মালাই চাসহ ১০ প্রকারের চা থাকলেও সুনাম কুড়িয়েছে ৩০ টাকা মূল্যের মালাই চা।
সুস্বাদু এই চা পান করতে শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ আসেন দোকানটিতে। বিভিন্ন প্রকারের এসব চা প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৩ হাজার কাপের বেশি বিক্রি করেন নজরুল।
বিক্রি থেকে তার দৈনিক আয় হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। চা ছাড়াও নজরুলের দোকানে নিজস্ব তৈরি মালাই আইসক্রিম ও বিভিন্ন প্রকারের সুস্বাদু বিস্কুট পাওয়া যায়। প্রতিদিন মাত্র ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা চা বিক্রি করে বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সচ্ছলতার সঙ্গে সংসারের খরচ বহন করেন নজরুল।
প্রায়ই নজরুলের চায়ের দোকানে চা পান করতে আসেন স্থানীয় সজিব শিকদার। তিনি বলেন, শরীয়তপুরের মানুষের বিনোদনের জন্য কোনো পার্ক বা মাধ্যম না থাকায় প্রতিদিনই মানুষ আংগারিয়া বাইপাসে আসেন বিনোদনের জন্য।
বাইপাস সংলগ্ন হাইওয়ে চায়ের আড্ডা দোকানে মানুষ চায়ের জন্য ভিড় জমায়। নজরুলের চায়ের বেশ সুনাম থাকায় মানুষ ভিড় উপেক্ষা করে চা পান করে। নজরুল আমাদের গ্রামেরই ছেলে। চা বিক্রি করে সে বেশ ভালোই উপার্জন করে।
রিপন নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী এসেছেন স্ত্রী পরিজন নিয়ে নজরুলের চা পান করতে। তিনি বলেন, ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকি বলে তেমন আসতে পারি না নজরুলের চা পান করতে। তবে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের অনুরোধে প্রায়ই আসা হয় তার চায়ের স্বাদ নিতে।
নজরুলের দোকানের সব ধরনের চা’ই পান করেছি আমি। সবচেয়ে বেশি মজাদার চা হলো মালাই চা। তবে আমার ছোট মেয়ে তার দোকানের মালাই আইসক্রিম বেশি পছন্দ করে।
চা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকে ব্যবসার প্রতি ঝোঁক ছিল আমার। প্রথমে ভেবেছিলাম রেফ্রিজেটর মেরামতের ব্যবসা করে ভালোই আয় করতে পারব। কিন্তু তা হয়নি বলে মামার পরামর্শে দুই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে বাইপাসে চায়ের দোকান করেছি।
আগে সকাল-বিকেল দোকান করলেও সেই দুই হাজার টাকা থেকে এখন আমি প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করি। বাবা-মায়ের ওষুধপত্রসহ ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা ও সংসার সব খরচ আমি বহন করি।
এসব ব্যয় বহন করতে আমার ভালোই লাগে, কারণ আল্লাহ আমাকে আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি। বেকার না থেকে ছোট কিছু দিয়ে আয় শুরু করলেও আল্লাহর প্রতি ও কাজের প্রতি মনোযোগ দিলে সফল হওয়া সম্ভব।
আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আকিবর খান বলেন, নজরুল হাইওয়েতে চা বিক্রি করে। চায়ের স্বাদ ও গুণাগুণ রক্ষায় সে বেশ মনোযোগী। আর এই জন্যই তার দোকানের চা পান করার জন্য মানুষ ভিড় করে। চা বিক্রি করে পরিবার নিয়ে বেশ ভালোই জীবন কাটছে নজরুলের।- ঢাকা পোস্ট