আবদুর রশিদ ও সত্যজিৎ ঘোষ: কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উৎসবমুখর পরিবেশে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোট উপলক্ষে দু-একটি কেন্দ্রের সামনে মেলাও বসে। তবে ভোটের মাঠে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কিংবা তাঁদের এজেন্টদের উপস্থিতি ছিল নামমাত্র। ইউপি নির্বাচনে ১৯টি ইউনিয়নের ১৭৬ কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টিতে ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। সকাল সাড়ে আটটায় ভেদরগঞ্জের নারায়ণপুর ইউনিয়নের ইকরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। লাইনে উপস্থিত আবুল জমাদ্দর বলেন, ‘ঢাকা থেকে ভোট দিতে গ্রামে আসছি। ভোট দিয়া আজকায় ঢাকা চইল্যা যামু।’ এই কেন্দ্রে অন্য সব প্রার্থীর এজেন্ট থাকলেও ধানের শীষের কোনো এজেন্ট ছিল না। তবে এর একটু দূরে বা ঐকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছিল সব প্রার্থীর এজেন্ট। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শাহীন মিয়া বলেন, কোনো অনিয়ম হয়নি, কেউ হুমকি-ধমকিও দেয়নি।
সকাল ১০টার দিকে ডামুড্যার সিড্যা ইউনিয়নের সিড্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের মোটামুটি উপস্থিতি চোখে পড়ল। সেখানেও ধানের শীষের এজেন্টদের দেখা গেল না। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শাহজালাল মিয়া বলেন, ‘বিএনপির কোনো এজেন্ট আসেনি। না এলে তো আমাদের করার কিছু নেই।’ জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, হামলা-মামলা, গ্রেপ্তারের ভয়ে তাঁদের প্রার্থীরা কেন্দ্রে যেতে পারেননি। এমনকি প্রচারণাও চালাতে পারেননি। দক্ষিণ সিড্যা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, একটি টিনশেড ঘরের মাঝখানে হোগলার পাটি দিয়ে বিভক্ত করে দুটি কক্ষ বানানো হয়েছে। একটিতে ভোট দিচ্ছেন নারীরা। অন্যটিতে পুরুষ। ঘরটি এতই ছোট যে সেখানে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বসতেও পারছিলেন না। তবে মনে খেদ ছিল না সেখানকার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল মালেকের। তিনি বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে, এটাই শান্তি।’
ভেদরগঞ্জের চর কুমিরার সামাদ খাঁর বাড়ি কেন্দ্রে গিয়ে আরও একটি বেহাল ভোটকেন্দ্রের দেখা মিলল। একটি টিনশেড ঘরে কেউ খাটের ওপরে, কেউবা মাটিতে বসে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এখানে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘রাতে পাশের একটি মসজিদে নির্বাচনী জিনিসপত্র নিয়ে ঘুমিয়েছি। সকালে এই কক্ষে এসে দায়িত্ব পালন শুরু করি। এমন কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করা যায় না।’ দুপুর ১২টার দিকে কনেশ্বর ইউনিয়নের সৈয়দবস্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশের দেখা মিলল। ভোটকেন্দ্রের অদূরেই ১৪টি দোকানে বিভিন্ন খাবার ও খেলনার পসরা সাজান ‘ভোট মৌসুম ব্যবসায়ীরা’। এই কেন্দ্রেই নাতি আবদুল আউয়ালের কোলে চড়ে ১০৫ বছর বয়সী মমতাজ বিবি আসেন ভোট দিতে।
তবে ভোট শেষ হওয়ার পর কয়েকটি ইউনিয়নে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা এবং কয়েকজন প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার খবর শোনা যায়।-প্রথম আলো
৫ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ