টাঙ্গাইল: আজ সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপের চাপায় এক স্কুল শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সাভারের ধামরাইয়ে কসমস এলাকায় দুটি বাসের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ দুর্ঘটনায় আরও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। শুক্রবার (৩ আগস্ট) এ ঘটনা ঘটে।
তবে তাৎক্ষণাত নিহতদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপের চাপায় সাদিয়া জাহান (১৫) নামে দশম শ্রেণির এক স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হয়। উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের বড়চওনা বেলতুলি বাজার এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাদিয়া আক্তার ওই এলাকার আজহারুল ইসলামের মেয়ে। সে স্থানীয় বড়চওনা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল।
সাদিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তার সহপাঠীসহ বিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও জনতা ‘নিরাপদ সড়ক চাই!’ দুর্ঘটনার বিচার চাইসহ নানা স্লোগান দিয়ে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সাদিয়ার মৃত্যুতে তার পরিবারে শোকের মাতম চলছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার ঢাকা-সখীপুর-সাগরদিঘী সড়কের বেলতলী নামক স্থানে পায়ে হেঁটে বাড়ির দিকে আসছিল সাদিয়া।
এ সময় বেপরোয়া গতিতে আসা একটি পিকআপ পেছন দিক থেকে তাকে ধাক্কা দিলে সে গুরুতর আহত হয়। প্রথমে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান তার অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে দুপুর ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাদিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম তুহিন আলী জানান, এ ঘটনায় ঘাতক চালককে আটক এবং গাড়িটিকে জব্দ করা হয়েছে। তাছাড়া মামলা দায়েরর প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ওসি।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হয় আরও ক’জন। দুপুর ১টার দিকে উত্তরাগামী জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস মিরপুর ফ্লাইওভার থেকে নেমে অন্য আরেকটি বাসের সাথে পাল্লা দিলে কুর্মিটোলায় এমন দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে ফ্লাইওভার থেকে নামার পর উত্তরাগামী আরেকটি বাসের সাথে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দেয় জাবালে নূর বাসটি। এ সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল শিক্ষার্থীরা। বেপরোয়া গতির কারণে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর তুলে দেন চালক। ঘটনার পরপরই আশপাশের এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর করেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার দিন থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনে অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী। রাজধানী ছাড়াও দেশের কয়েকটি জেলায় এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত কয়েকজন নারীর সাথে কথা বলে জানা যায় রাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হলেও তারা তা নিয়ে একেবারেই অসন্তুষ্ট নয়।
‘যানজটের কারণে জীবনে অনেক দুর্ভোগ হয়েছে, অনেক রাগও হয়েছে। কিন্তু এই দুর্ভোগে এতটুকু কষ্ট নেই। আজ এতটুকু রাগ লাগেনি, বরং মনে হয়েছে এই প্রতিবাদ আরও অনেক বছর আগে করা উচিত ছিল।’ একই ধরণের মতামত ছিল অধিকাংশ মানুষেরই।