টাঙ্গাইল: কবরের পাশে কোরআন তেলাওয়াত চলছে। বিষয়টি কোনো অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নয়। এ ধারাবাহিকতা চলছে ৯১ বছর ধরে। একদিনের জন্যও তা বন্ধ হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ বিগ্রহ, রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেক কিছুই হয়েছে এই নয় দশকে। কিন্তু থামেনি এই কোরআন পাঠ।
দীর্ঘদিন ধরে অবিরাম কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে। সেখানে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর বাড়িতে মসজিদ চত্বরে তার (নওয়াব আলী চৌধুরী) কবরের পাশে চলছে এই তেলাওয়াত। ধনবাড়ীর নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী ১৮৬৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলিম মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
উইকিপিডিয়ায় জানা যায়, ১৯১১ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৃথক দুইটি মানপত্রে নবাব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সভায় তিনি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা দিলে তিনি নিজ জমিদারির একাংশ বন্ধক রেখে এককালীন ৩৫ হাজার টাকা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বাবদ ১৬ হাজার টাকার একটি তহবিল নওয়াব আলী চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিনেট ভবনের নাম ‘সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন’ নামকরণ করেন। নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল ৬৫ বছর বয়সে মৃ’ত্যুবরণ করেন।
ধনবাড়ী মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মওলানা মুফতি ইদ্রিস হোসাইন জানান, মৃত্যুর আগেই নওয়াব আলী চৌধুরী মসজিদের কাছে তার কবরের জায়গা নির্ধারণ করেন।
প্রতিদিন চারজন হাফেজ কোরআন পাঠের দায়িত্বে থাকেন। তারা পালাক্রমে তেলাওয়াত করেন। এদেরই একজন হাফেজ মো. আব্দুস সামাদ।
তিনি জানান, সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে আটটা, সাড়ে আটটা থেকে বেলা ১১টা, বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা, দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল চারটা এবং বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা। এভাবে আবার রাতের পালাও শুরু হয়। একেক শিফটে (পালা) একেকজন কোরআন পাঠের দায়িত্ব থাকেন। বর্তমানে হাফেজ আব্দুস সামাদ ছাড়াও মো. কামরুজ্জামান, আবু হানিফ ও হেদায়েত হোসেন নিয়মিত কোরআন পাঠে নিয়োজিত রয়েছেন।
এরা কেউ অসুস্থ হলে অথবা ছুটিতে বাড়িতে গেলে মসজিদের পাশেই হিফজখানা থেকে ছাত্রদের দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা হয়। তেলাওয়াতকারীরা এখানে কোরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি হিফজখানায় শিক্ষকতা করেন। আর সেখান থেকেই তাদের সম্মানী দেওয়া হয়।
সরেজমিন ধনবাড়ী গিয়ে দেখা যায়, নওয়াব আলীর কবরের পাশে একজন কোরআন পাঠ করছেন। দৃষ্টি নন্দন এই মসজিদটি দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন। মসজিদের পাশাপাশি তারা দেখে যান অবিরাম কোরআন পাঠ।
ধনবাড়ী এলাকার মুক্তাদির ছিন্টু জানান, দীর্ঘদিন ধরে টানা কোরআন পাঠ চলছে। এটি দেখতে অনেক মানুষ আসেন।
ওই এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা খন্দকার জহিরুল ইসলাম জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই এই কোরআন পাঠ দেখে আসছেন। এটি কোনোদিন বন্ধ হয়নি। নবাব নওয়াব আলীর ১৯০৩ সালে তার সব সম্পত্তি ‘নওয়াব আলী খোদা বক্স ধনবাড়ী ওয়াক্ফ এস্টেট’ নামে ওয়াক্ফ করে দেন।
এই এস্টেটের অন্যতম কর্নধার নওয়াব আলী চৌধুরীর নাতনি জামাই আকবর উদ্দিন আহমেদ জানান, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর ইচ্ছে অনুযায়ী এই কোরআন পাঠ চলছে। এটি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। -তথ্যসূত্র: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।