সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৭, ১০:৩২:৩৯

অন্ধকার দিনাজপুরে পানিবন্দি ৬ লাখ মানুষ

অন্ধকার দিনাজপুরে পানিবন্দি ৬ লাখ মানুষ

দিনাজপুর: দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে শহরের বিভিন্ন এলাকা।

রেলপথ ডুবে যাওয়ায় সারাদেশের সঙ্গে দিনাজপুরের রেল যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় যান চলাচলও বন্ধ। বন্যাদুর্গত এলাকায় বিদ্যুতের মিটার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে পানিবন্দি ৬ লাখ মানুষ অন্ধকারে পতিত হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন সংযোগ সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় শুধু বীরগঞ্জ বাদে জেলা সদরের সঙ্গে ১১ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সোমবার দুপুরে দিনাজপুর শহরের পাশে পুনর্ভবা নদীর তীরে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

তিনি সরকারের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেন। পরিদর্শনের সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর জোনের প্রধান প্রকৌশলী আজিজ মোহাম্মদ চৌধুরী, দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ জামান আশরাফসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।

পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। কোনো সমস্যা হবে না। আপনারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করুন। তিনি ভেঙে যাওয়া বাঁধ দ্রুত মেরামতের জন্য দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ৬ লাখ মানুষ। দুর্গতদের জন্য ২ হাজার ৯০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। পুনর্ভবা নদীর শহর রক্ষা বাঁধ এবং আত্রাই নদীর বাঁধ ভাঙা পানি শহরের বালুবাড়ী, খালপাড়া, মালদহপট্টি, নিমতলা, চকবাজার, মির্জাপুর, শেখপুড়া পুলহাট, ঈদগাবস্তি, কসবা, উপশহর, রামনগর, সুইহারী, বড়বন্দর, ফকিরপাড়া এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

দিনাজপুর শহর রক্ষা বাঁধসহ বেশ কয়েকটি নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জেলার অধিকাংশ স্থান প্লাবিত হয়েছে। বাড়ি-ঘর ডুবে গৃহহীন হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ৬ লাখ মানুষ।

দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়েজুর রহমান জানান, পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৪ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার, আত্রাই নদীর পানি ৪০ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার, ইছামতির পানির ২৯ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে দিনাজপুর রেলস্টেশনের সুপার গোলাম মোস্তফা জানান, পার্বতীপুরের বিভিন্ন অংশে রেললাইন ডুবে যাওয়ায় রোববার দুপুরের পর থেকে সারাদেশের সঙ্গে দিনাজপুরের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

দিনাজপুর মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বী জানান, দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম বলেন, পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। দিনাজপুর শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সেই বাঁধ সংস্কারে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। বিজিবি বাঁধটি সংস্কারে ব্যর্থ হওয়ায় দুপুরে বাঁধ সংস্কার এবং বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী।

মেজর তৌহিদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের ৫২ জন সদস্য বাঁধ সংস্কার ও বানভাসি মানুষকে উদ্ধারের কাজ শুরু করেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুজ্জামান জানান, জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে