সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:২৩:৫৩

পহেলা বৈশাখ কি ইসলামী শরীয়তে জায়েজ, কি বলছে ইসলাম?

পহেলা বৈশাখ কি ইসলামী শরীয়তে জায়েজ, কি বলছে ইসলাম?

ইসলাম ডেস্ক : একজন মুসলিম মাত্রই সহজে বুঝবার কথা – পহেলা বৈশাখ কিংবা নববর্ষ পালন ইসলামে জায়েজ নেই। কারণে উত্সবের সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় রীতিনীতি বিধর্মীদের কাজ এগুলো কখনো কোনো মুসলমানের কাজ হতে পারেনা। এমনসব কাজ বা তার অনুকরণ ও ইসলামের বিধানের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

ঘটা করে পহেলা বৈশাখের শুরু-ই করা হয় কুফরী ও শিরকের মতো আচার পালনের মাধ্যমে। রমনা বটমূলে সূর্য ওঠার সাথে সমবেত কন্ঠে রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করে নেয়া হয়। বাহ! ফজরের সালাতের পরিবর্তে ছেলেমেয়ে একসাথে বসে সংগীতের মাধ্যমে দিন শুরু করেন।

কপালে লাল টিপ, সিথিতে সিঁদুর দেয়া মেয়েরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি সহ ধুতি-পাঞ্জাবী পরা ছেলেদের হাত ধরে শহরময় ঘুরে বেড়ান। দ্বীন ইসলামে 'পর্দা' নামে যে একটি বিষয় আছে – সেদিন বুঝার কোন উপায় থাকে না।

চারুকলা থেকে এরপর বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা নামক একটি ভয়ানক বিষয়। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল মোটামুটি লাইভ দেখায় এই শিরকী মিছিল। ঢোল-তবলা-ডুগডুগি বাজিয়ে, জীব-জানোয়ারের মুখোশ পরে কিংবা মাথায় নিয়ে, ছেলেমেয়ে একসাথে হুল্লোড় করতে করতে নাচতে থাকে মিছিলে। মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল উপাদ্য থাকে "সমাজ থেকে অশুভ শক্তি বিদায়" করা। মাথায় করে নিয়ে বেড়ানো এইসব জীবজন্তুকে তারা অশুভ শক্তি দূর করার প্রতীক বলে মানেন! সত্যি অবাক করা মতো!

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নতুন ডিজাইনের জামাকাপড় আসে মার্কেটে। নতুন জামা না কিনলে প্রেস্টিজ থাকে না তরুণ-তরুনীদের। কেনাকাটা, সেই উপলক্ষে ঘুরে বেড়ানো ঈদের চেয়ে কোন অংশে কম মনে হয় না। বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানি গুলো উন্মুক্ত কনসার্টের আয়োজন করে। নারীপুরুষ কোন ভেদাভেদ ছাড়াই সেখানে ভিড় করে গান শুনে, নাচে, উল্লাস প্রকাশ করে। এমনসব অনুষ্ঠানকে আপনি কি ভাবে দেখবেন বলেন?

উপরের সব কয়টি 'কাজ' পবিত্র কুরআন এবং হাদীসের আলোকে স্পষ্টতঃ শিরক, কুফর, হারাম ও বিদ'আত। রাসুলুল্লাহ (সা.), তার সাহাবীরা, পরবর্তী তাবেঈ ও তাবে তাবেঈ দের কেউ এই জাতীয় কোন অনুষ্ঠান পালন করেছেন বলে খুঁজে পাওয়া যায় নি। ইসলামি শরীয়াহতে এই সব আচারের কোন বিধান নেই। এই সব অনুষ্ঠানের সাথে যাবতীয় সম্পৃক্ততাকে ইজমা'র পরিপ্রেক্ষিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন সম্মানিত উলামারা।

মুসলমান কেন এমন শিরকী অনুষ্ঠান বর্জন করবে না? এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন-
قُلْ أَنَدْعُو مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُنَا وَلَا يَضُرُّنَا وَنُرَدُّ عَلَىٰ أَعْقَابِنَا بَعْدَ إِذْ هَدَانَا اللَّهُ كَالَّذِي اسْتَهْوَتْهُ الشَّيَاطِينُ فِي الْأَرْضِ حَيْرَانَ لَهُ أَصْحَابٌ يَدْعُونَهُ إِلَى الْهُدَى ائْتِنَا ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ ۖ وَأُمِرْنَا لِنُسْلِمَ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
-হে মুহাম্মাদ ! তাদেরকে জিজ্ঞেস করুণ, আমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে ডাকবো, যারা আমাদের উপকারও করতে পারে না, অপকারও করতে পারে না? আর আল্লাহ যখন আমাদের সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন তখন আবার কি আমরা উল্টো দিকে ফিরে যাবো? আমরা কি নিজেদের অবস্থা সে ব্যক্তির মতো করে নেবো, যাকে শয়তানরা মরুভূমির বুকে পথ ভুলিয়ে দিয়েছে এবং সে হয়রান, পেরেশান ও উদ্ভান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে? অথচ তার সাথীরা তাকে চীৎকার করে ডেকে বলছে, এদিকে এসো, এখানে রয়েছে সোজা পথ? বলো, আসলে আল্লাহর হেদায়াতই একমাত্র সঠিক ও নিভুর্ল হেদায়াত এবং তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে নির্দেশ এসেছে, বিশ্ব জাহানের প্রভুর সামনে আনুগ্রত্যের শির নত করে দাও। [সূরা আনআম-৭১]

রাসুল ﷺ বলেন,
من تشبه بقوم فهو منهم
- যে ব্যাক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুসরন করবে সে তারই অন্তরভুক্ত হবে।

রাসুল ﷺ আরো বলেছেন,
-যে আমার সুন্নতকে ভালবাসলো সে যেনো আমাকে ভালবাসল্,আর যে আমাকে ভালবাসলো সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে।

এবিষয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে কারীমে এরশাদ করেন : "যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।"
[সুরা আল ইমরান, ৮৫]

আল্লাহ আরো বলেন : ‘তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’
[সুরা আল মায়িদাহ, আয়াত ৪৮]

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদ'আত এবং প্রত্যেক বিদ'আত ভ্রষ্টতা।"
[সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৯৯১ ও জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৭৬]

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী মহান আল্লাহ্‌র কিতাব (কুরআন) এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদ'আত এবং প্রত্যেক বিদ'আত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।"
[সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৩৫ ও সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৫৬০]

হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) মদীনাতে আগমন করলেন, আর মদীনাবাসীর দুটি দিন ছিল যাতে তারা বিনোদন বা খেলাধুলা করত। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, "এই দিন দুটি কি?" তারা বলল, 'আমরা এই দিনে জাহিলি যুগে খেলা ধুলা করতাম।' তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, "মহান আল্লাহ তোমাদেরকে এই দিন দুটির পরিবর্তে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। আর তা হলো ঈদুল ফিতরের দিন ও ঈদুল আযহার দিন।"
[সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১১৩৪]

উপরের হাদীসের মাধ্যমে ইসলাম ও অন্য ধর্মের যাবতীয় উৎসবের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসেবে সামনে এসেছে বৎসরে দু'টি মাত্র দিন; ঈদুল ফিতরের দিন ও ঈদুল আযহার দিন।

অনেকেই প্রশ্ন করবেন বলে রেডি হয়ে আছেন নিশ্চিত – “পহেলা বৈশাখ তো আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। এটি তো ধর্মীয় কোন উত্সব নয়। তাহলে এইটা কেন বিদ'আত হবে? বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। আমাদের বাংলা বর্ষ শুরুর দিনে আমরা তো একটু আনন্দ করতেই পারি।“

(১) ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। মুসলমানদের জন্য উত্সবের দিন ২ টি। এর বাইরে কোন একটি দিনকেও উত্সব আকারে নেয়ার কোন উপায় নেই আমাদের। উপরের শেষ হাদীসটি-ই যথেষ্ট এই বিষয়টি প্রমান করার জন্য।

(২) রাসুলুল্লাহ (সা.) মদীনায় যাবার পরে যে দুইটি উত্সব বাতিল ঘোষণা করে মুসলিমদের দুই ঈদের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার একটি ছিল "নওরোজ বা নতুন বর্ষের উত্সব"!

আর কিছু কি বলার আছে এতো কিছুর পরে? তারপরেও অনেক ভাইবোন এর বিপরীতে যুক্তির পাহাড় দাঁড় করাবেন। অবশ্যই এই যুক্তির পাহাড় এর ভিত্তি তাক্বওয়ার উপরে নয়। অনিবার্য ধ্বংসই এর পরিনতি।

আমরা একমাত্র মহান আল্লাহর কাছে দু'আ করি - তিনি যেন মুসলিমদেরকে তাদের দ্বীনের ব্যাপারে গর্বিত করেন এবং ইসলামকে দৃঢ়ভাবে মেনে চলতে সাহায্য করেন।
১১ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে