সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭, ০৮:৫১:০৪

প্রধান বিচারপতিকে তার পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল : প্রধানমন্ত্রী

প্রধান বিচারপতিকে তার পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল : প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক : সংসদ নিয়ে কথা বলার আগে প্রধান বিচারপতিকে তার পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ২১ গ্রেনেড হামলা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

তিনি বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করা ও পক্ষ নেওয়া প্রধান বিচারপতির কাজ নয়। প্রধান বিচারপতি তার পর্যবেক্ষণে সংসদ সদস্যদের নিয়ে যে বৈধতা ও অবৈধতার প্রশ্ন এনেছেন এ ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে না। কথাগুলো পর্যবেক্ষণে লেখার আগে এ পথ থেকে ওনার সরে যাওয়া উচিত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকিছু সহ্য করা যায়, কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা সহ্য করা যায় না। করব না। আমি জনগণের কাছে এর বিচারের ভার দিলাম। জনগণই এর বিচার করবে। আমার বাবা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আমরা এর ফল ভোগ করছি। স্বাধীনতা ভালো, কিন্তু এটি বালকের জন্য নয়।

শেখ হাসিনা বলেন, জীবন দেওয়ার মালিক আল্লাহ, জীবন বাঁচানোর মালিকও আল্লাহ। সুতরাং আমি কারও কাছে মাথানত করব না। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির যে ষড়যন্ত্র, এই ষড়যন্ত্র বারবার এদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রাকে ব্যাহত করেছে। আবার এখন এসেছে উচ্চ আদালতের ভূমিকা এবং সেখানে যে সমস্ত বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আর সবথেকে যেটা অপমানজনক যে পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা। যে পাকিস্তানকে আমরা যুদ্ধে হারিয়েছি। যুদ্ধে হারিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। অনেকেই পাকিস্তানের দালালি করেছে। হ্যাঁ, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করে সেই দালাল গোষ্ঠী ক্ষমতায় এসেছিল। এটা হল বাস্তবতা। '

তিনি আরো বলেন, 'আমি ও আমার ছোটবোন বাবা মা হারিয়েছি, আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছি। আমাদের তো বিচার চাওয়ারই সুযোগ ছিল না। ইনডেমনিটি করে বিচার চাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা বিচার চাইব, আমরা এদেশের নাগরিক, আমাদের সেই অধিকারটুকু কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। '

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, হঠাৎ করে উচ্চ আদালত থেকে নানা ধরনের বক্তব্য, রাজনৈতিক কথাবার্তা এবং হুমকি ধামকি। আমরা মাঝে মাঝে অবাক হই, যাদেরকে আমরাই নিয়োগ দিয়েছি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ পাওয়ার পরে হঠাত্ তাদের বক্তব্য শুনে.. এবং পার্লামেন্ট সম্পর্কে যেসব কথা বলা হচ্ছে, পার্লামেন্ট সদস্য যারা তাদেরকে ক্রিমিনাল বলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সেখানে ব্যবসায়ী আছে সেটাও বলা হচ্ছে। ব্যবসা করাটা কি অপরাধ? কোন ব্যবসায়ী মামলা করলে উচ্চ আদালত কি তাদের পক্ষে রায় দেয় না? রায় তো দেয়। কারণ বিচার তো তারাও পায়। তারা যদি সংসদ সদস্য হয় তবে অপরাধটা কোথায়? এই ধরনের পার্লামেন্টকে হেয় করা। পার্লামেন্টকে নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দেওয়া এটার অর্থটা কী?

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অনেক সংগ্রাম করে, অনেক রক্ত দিয়ে এ দেশকে আমরা সাংবিধানিক ধারায় নিয়ে এসেছি। যেখানে ৭৫-এর পর ১৯টা ক্যু হয়েছে বাংলাদেশে। হাজার হাজার সামরিক বাহিনীর অফিসার, সৈনিকদের হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত একটা হত্যাকাণ্ড লেগেই থাকত। আমরা সেই অবস্থা থেকে একটা সুস্থ শান্তিপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে এসেছি।

তিনি বলেন, আমাদের প্রধান বিচারপতির রায়ে পার্লামেন্ট সম্পর্কে বক্তব্য, সংসদ সদস্য সম্পর্কে বক্তব্য, এমনকি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাও নিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা। এটা কোন ধরনের কথা? আমাদের সংবিধান আছে, যে সংবিধান আমরা ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি। সেই সংবিধানে কোন কোন অনুচ্ছেদ যেটা মূল সংবিধানে ছিল, সেটা ওনার পছন্দ না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওনার পছন্দ কোনটা? ওই জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা খল করে, এটা হাইকোর্টেরই রায় যে জিয়ার ক্ষমতা অবৈধ। সেই ক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করে মার্শাল ল অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করে দিয়ে গেছে সেটা ওনার পছন্দ। কিন্তু আমারে গণপরিষদ যে সংবিধান প্রণয়ন করে গেছেন সেটা ওনার পছন্দ না। সেখানে উনি চাচ্ছেন মার্শাল ল যেটা করে গেছেন সেটা। আমার এখানে একটা প্রশ্ন পুরো আদালতের দায়িত্ব সব ওনার হাতে দিতে হবে? তিনি কী করবেন?

তিনি বলেন, জয়নাল আবেদীন, তিনি জজ ছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার যে তদনত্ম প্রতিবেদন তিনি দিয়ে গেছেন, সেটা সম্পূর্ণ ভুয়া, মিথ্যা তথ্য দিয়ে, মনগড়া তথ্য দিয়ে বলতে গেলে বিএনপি সরকারের ফরমায়েশি তদন্ত প্রতিবেদন তিনি দিয়ে গেছেন। তিনি যে দুর্নীতি করেছেন, সেই দুর্নীতির তদন্ত দুদক যখন করতে গেছে, দুদকের পক্ষ থেকে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছিল, সেখানে প্রধান বিচারপতি চিঠি দিয়ে দিলেন যে এই জয়নাল আবেীনের দুর্নীতির তদন্তও করা যাবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করবে। তদন্তে যদি দোষী প্রমাণিত হতো তবে আদালতেই বিচার চাইতে যেতে হতো। তো আদালতে বিচার চাইলে না হয় তিনি কিছু বলতে পারতেন, কিন্তু তদন্তই করা যাবে না এটা প্রধান বিচারপতি হয়ে তিনি কীভাবে বলেন? তার মানে একজন দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেওয়া।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে