রংপুর থেকে : রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রকাশ্যে মাঠে নেই ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী। যদিও জোটের প্রধান শরিক বিএনপি’র নেতারা বলছেন, জামায়াত সক্রিয় আছে। তারা ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কোনো এলাকায় জামায়াতের কাউকে ভোট চাইতে বা প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি।
দলটির নেতাকর্মীরা এই নির্বাচনে অনেকটা রহস্যময় ভূমিকা পালন করছে। জামায়াতের একজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা জানান, মেয়র পদে জামায়াতের কোনো প্রার্থী নেই। তবে দুইজন কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন। তাদের পক্ষেও অনেকটায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় জামায়াত। আর পুলিশি হয়রানির ভয়ে বিএনপির পক্ষে মাঠে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা ভোটের দিন মাঠে থাকবো।
জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির পক্ষ থেকেই জামায়াতকে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করতে বলা হয়েছে। বিএনপি নেতারা চাইছেন না জামায়াত মাঠে এসে কোনো প্রকার সহিংসতায় জড়াক। তাছাড়া পুলিশি হয়রানি তো রয়েছেই। তবে বিএনপি চায় ভোটের দিন যেন জামায়াত ও ছাত্রশিবির মাঠে থাকে। এজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি নেতারা যোগাযোগ করেছেন। ভোটের দিন কেন্দ্র পাহারা এবং ভোট কারচুপি ঠেকাতে জামায়াতের সহায়তা চায় বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, মামলা-হামলার ভয়ে জামায়াতের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসছেন না। তবে তারা গোপনে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করি জামায়াতের সবাই ধানের শীষে ভোট দেবেন। রংপুর মহানগর ছাত্রশিবিরের একজন শীর্ষ নেতা জানান, বিএনপির পক্ষে কাজ করার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা এসেছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই নির্দেশনা মানা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ভোটাররা ভোট দেবে প্রার্থী দেখে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশনে জামায়াতের ভোট আছে প্রায় ৪০ হাজার। গত সিটি নির্বাচনের চেয়ে জামায়াতের ভোট বেড়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিতে জামায়াত রংপুরে এককভাবে শক্তি প্রদর্শন করেছে। রংপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতের প্রভাব রয়েছে। যে কারণে বিএনপি নেতারা জামায়াতকে পাশে রাখতে চাইছেন।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গে জামায়াতের সুসম্পর্ক রয়েছে। আর বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী কাওছার জামান বাবলাকে জামায়াতের অনেকেই প্রার্থী হিসেবে পছন্দ করেন না। তাই জামায়াতের ভোটের একটা বড় অংশ মোস্তফার পক্ষে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ আশঙ্কার কথা নাকচ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, জামায়াতের একটি বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা : রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণায় ব্যস্ত দিন পার করছেন মেয়র প্রার্থীরা। প্রার্থীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু নুরপুর, মহাদেবপুর এলাকায় প্রচারণায় চালান।
অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা প্রচারণা চালিয়েছেন পৌরবাজার, হনুমানতলা ও লালবাগ এলাকায়। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন ফারুক। জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা প্রচারণা চালিয়েছেন কলেজ রোড এলাকায়।
উল্লেখ্য, গত ৫ই নভেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এই সিটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১৯৬টি। মোট ভোটকক্ষ ১ হাজার ৭৭৭। জাতীয় পার্টি ৪ঠা নভেম্বর মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে এবং আওয়ামী লীগ সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে ১১ই নভেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করে।
আর বিএনপি সবশেষে ২১শে নভেম্বর মহানগর কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি কাওসার জামান বাবলাকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করে। ২০১২ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মনোনীত না হয়েও বাবলা মেয়র পদে নির্বাচন করে পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট। এবার তিনি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু রংপুরের প্রথম নগরপিতা। ওই নির্বাচনে তিনি ভোট পেয়েছিলেন ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতা মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট। -এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি