শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮, ০১:১৭:২০

৫ তালিকায়ই যাদের নাম তারাই টার্গেট: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

৫ তালিকায়ই যাদের নাম তারাই টার্গেট: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক: চলমান মাদকবিরোধী অভিযানকে কেউ কেউ সমর্থন করছে। কেউ কেউ অভিযানে প্রাণহানির ঘটনাকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলে সমালোচনা করছে। আবার মাদকের গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে—এমন অভিযোগও আছে। এসব বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সাক্ষাৎকার। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওমর ফারুক।

প্রশ্ন : এ পর্যন্ত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৪২ জন মারা  গেছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই প্রাণহানির ঘটনায় সমালোচনা করছে এবং উদ্বেগ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : ‘বন্দুকযুদ্ধের’ কথা কখনো বলিনি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তালিকা করে দিয়েছে। সেই তালিকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দিয়ে দিয়েছি। যারা দোষ স্বীকার করছে তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কিংবা রেগুলার কোর্টের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করেছি। আপনারা জানেন, যারা মাদক পাচার করে তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। গোয়েন্দারাও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। গেলেই তারা ফায়ার ওপেন করছে। নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা ফায়ার করছে। এ ঘটনা এভাবেই ঘটছে। এখনো মোবাইল কোর্ট বা রেগুলার কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হচ্ছে। এই কদিনে আড়াই হাজার অপরাধীকে আটক করা হয়েছে।

প্রশ্ন :  কক্সবাজারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মাদক সম্পৃক্ততার কথা ওঠে প্রায়ই। তাঁর ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : বহুবার তাঁকে ডেকেছি, তাঁর কথা শুনেছি। অনেক গোয়েন্দা সংস্থাও তাঁর নাম বলছে। আজ পর্যন্ত বিচার করার জন্য কনক্রিট এভিডেন্স আমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।

প্রশ্ন : মাদক কারবারিদের তালিকা করার ক্ষেত্রে কিভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হচ্ছে?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আমরা তালিকা একটি করিনি। পাঁচটি তালিকা পেয়েছি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও অন্য গোয়েন্দারা পাঁচটি তালিকা করেছে। এসব তালিকায় যাদের নাম কমন রয়েছে তাদের মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

প্রশ্ন : মাদকের গডফাদারদের ধরা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য জানতে চাই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : মাদক ব্যবসায়ী যত শক্তিশালীই হোক রেহাই পাবে না।

প্রশ্ন : মাদকের মামলায় ৬০ শতাংশ আসামি জামিনে বেরিয়ে যায়—এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : দেখুন আইনের ফাঁক-ফোকর গলে জামিন হয়ে যায়—এটা যেমন সত্য, অনেকে সাক্ষ্য দিতে যায় না এটাও সত্য। তারা মনে করে কোর্টে অনেক সময় নষ্ট হয়। সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। দীর্ঘ মামলার জট পড়ে গেছে। আমরা চাই মামলা নিষ্পত্তি হোক। যারা দোষ করেনি সন্দেহজনকভাবে আটক হয়ে কারগারে আছে তারা বেরিয়ে আসুক।

প্রশ্ন : বিএনপি এ অভিযানের সমালোচনা করছে। নির্বাচনের বছরে এমন অভিযানকে তারা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য জানতে চাই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : এর সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্কটা কী? দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মেধা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যুব শক্তি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এটার সঙ্গে ইলেকশনের কোনো প্রশ্ন নেই। তাদের (যুব সমাজ) প্রটেকশন দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। বিএনপি তার চিন্তাধারা থেকে কথা বলছে। তারা জনগণ থেকে সরে গেছে অনেক আগেই। হাজার হাজার ফোন পাচ্ছি। তারা বলছে, আপনারা ভালো কাজ করছেন। এটাই প্রমাণ করে তারা (বিএনপি) জনগণের সঙ্গে নেই।

প্রশ্ন :  ভারত থেকে ফেনসিডিল চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। মিয়ানমারের ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। তারা মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের সহযোগিতা করে। তাদের নজরদারির কারণে ফেনসিডিল আসা কমে গিয়েছে। সীমান্তে তারা ব্যবস্থা নিয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বৈঠক করেছেন, বিজিবি ওদের বিজিপির (সীমান্তরক্ষী পুলিশ) সঙ্গে বৈঠক করেছে। অং সান সু চির সঙ্গে আমি অনেকক্ষণ কথা বলেছি। কিন্তু ফল হয়নি। এ ছাড়া মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় দুর্গম রাস্তা রয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় হেঁটে যেতে দুই দিন লাগে। হেলিকপ্টার ছাড়া যাতায়াতের উপায় নেই। ওই সীমান্তচৌকিগুলোর সংখ্যা বাড়াচ্ছি। বর্ডার রোড করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইয়াবা কখনো সমুদ্র পথে আসে, কখনো বা নাফ নদ দিয়ে আসে। কখনো গহিন অরণ্য দিয়ে আসে—এসব কারণে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েও ইয়াবা পাচার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নিয়ে এগোনো হচ্ছে। মাদক অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনী বলে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটা প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেছি।

প্রশ্ন : মাদকের সঙ্গে কখনো কখনো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়? তাদের প্রতি কী বার্তা থাকবে?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কেন? সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষই তো জড়িয়ে গেছে। আমাদের মেসেজটা সবার জন্য। যাকেই শনাক্ত করব তাকেই শাস্তি পেতে হবে। যে-ই অপরাধ করবে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।

প্রশ্ন : মাদকবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে অনেক পুলিশ ‘বাণিজ্যে’ নেমেছে—এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কি কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : দেখুন, আমাদের পুলিশ-র‌্যাব এসব বিষয়ে সম্পৃক্ত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। সবাইকে একই মেসেজ দিতে চাই কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

প্রশ্ন : যে অভিযান চালানো হচ্ছে সেটাকে অনেকে ফিলিপাইন স্টাইলের অভিযান বলে উল্লেখ করছে। আপনি কী বলেন?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : ফিলিপাইন স্টাইলে হতে যাবে কেন? এটা বাংলাদেশ মডেল করছি। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আইনবহির্ভূত কোনো কাজ করে না।-কালের কণ্ঠ
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে