নিউজ ডেস্ক: বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে নারীদের পথচলা খুব একটা সহজ ছিল না। ঘরের চার দেয়াল ছিল নারীদের চিন্তা-চেতনার গণ্ডি। সেসময় যে কয়জন সাহসী নারী মুক্ত মনে বিশ্বকে অনুধাবন করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কবি সুফিয়া কামাল। তিনি শুধু নিজে স্বাধীন হননি, নারী স্বাধীনতা এবং সমাজের সকল কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে তাঁর কলম ছিল সোচ্চার। আজ (২০ জুন) তাঁর ১০৭তম জন্মদিন।
সুফিয়া কামালের জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন। বরিশালের আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে অবস্থিত শায়স্তাবাদ এলাকায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পৈত্রিক নিবাস কুমিল্লায়।
প্রচণ্ড মানসিক কষ্টে কাটে সুফিয়া কামালের শৈশব। কারণ তাঁর যখন সাত বছর বয়স, তখন তাঁর বাবা সন্ন্যাস জীবন বেছে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এরপর মায়ের ছায়াতলে বেড়ে ওঠেন সুফিয়া কামাল।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মুসলিম নারীদের জ্ঞান চর্চায় অনেক বাধা ছিল। স্কুল, কলেজে যাওয়া যেত না। আরবির বাইরে বাংলা এবং অন্যান্য শিক্ষা গ্রহণ করাও ছিল এক প্রকার নিষিদ্ধ। সুফিয়া কামাল নিজের চেষ্টায় পারিবারিক আবহে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন।
সুফিয়া কামালের প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশিত হয় ১৯২৬ সালে। কবিতাটি সে সময়ের প্রভাবশালী সাময়িকী ‘সওগাত’-এ প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে—সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, দিওয়ান, মোর জাদুদের সমাধি পরে প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। গল্পগ্রন্থ ‘কেয়ার কাঁটা’। ভ্রমণকাহিনী ‘সোভিয়েত দিনগুলি’। স্মৃতিকথা ‘একাত্তরের ডায়েরি’ অন্যতম।
সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি তিনি নারীমুক্তি, মানবমুক্তি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে গেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ৫০টিরও অধিক পুরস্কার লাভ করেছেন সুফিয়া কামাল। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি, সোভিয়েত লেনিন, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পদক উল্লেখযোগ্য।
১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়। বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম এই সন্মান লাভ করেন তিনি।
এদিকে সুফিয়া কামালের জন্মদিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা সুফিয়া কামালের আদর্শ ও সাহিত্যকর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন।