শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭, ১১:২৯:৪৩

আইপিএল আলেয়ার হাতছানি এবং...

আইপিএল আলেয়ার হাতছানি এবং...

স্পোর্টস ডেস্ক: এটা বিরাট একটা সংকট। অনেকে অনুমান করছেন-মুস্তাফিজ হয়তো আইপিএলের জন্য নিজেকে একটু বাচিয়ে রাখছেন। আমরা এতোটা নিষ্ঠুর না হই। মুস্তাফিজ এমনিতেই সেরে উঠছেন। সামনেই শ্রীলঙ্কা সফরে যাবেন। ফলে আইপিএল শুরু হওয়ার আগে তিনি এমনিতেই সুস্থ হয়ে উঠবেন।

আর এখানেই প্রশ্নটা উঠেছে, তার কী আইপিএলে খেলা উচিত হবে?

খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন। এরই মধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে শারীরিক ও মানসিকভাবে মুস্তাফিজ ততোটা টাফ নন, যতোটা ফাস্ট বোলাররা হয়ে থাকেন। ফলে তার ইনজুরিতে পড়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে বেশী এবং রিকভারি রেট বেশ খারাপ।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয় দল তাকে অনেক যত্ন নিয়ে পরিচালনা করছে।  খুব গুরুত্বপূর্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজ চলা অবস্থায় মুস্তাফিজ বলেছেন, স্বস্তি পাচ্ছে না; ম্যানেজমেন্ট তাকে বিশ্রাম দিয়েছেন। মেডিকেল পরীক্ষায় পুরোপুরি ফিট হওয়ার পরও এই স্বস্তি পাচ্ছেন না বলায় নিউজিল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে টেস্টেও বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু আইপিএল নিয়ে এখানেই প্রধান ভয়টা।

ছয় কোটি টাকার সোনার ডিম পাড়া হাসকে কী হায়দারাবাদ দল ‘বিশ্রাম’ দেওয়ার মতো বিলাসিতা দেখাবে? প্রশ্নই আসে না। নিতান্ত ইনজুরির ছোবল এসে না পড়লে টানা খেলতে হবে, একদিন বাদে একদিন খেলতে হবে মুস্তাফিজকে।

কোনো রকম অশুভ কামনা নয়।

 তারপরও চোখ বুজে বলে দেওয়া যায় এই জর্জর শরীরে মুস্তাফিজ এই ধকল সইতে পারবেন না। এরপর বছর জুড়ে বাংলাদেশের খেলা আছে। আইপিএলে ওই শতভাগ দিয়ে ফেরার পর পঞ্চাশ ভাগ মুস্তাফিজকেও বাকী মৌসুম জুড়ে পাওয়া যাবে না।

ফলে একটা সহজ রায় আমরা বাইরে থেকে বলে দিতে পারি, মুস্তাফিজের আইপিএলে যাওয়া ঠিক হবে না। বিশেষত মিশেল স্টার্কের উদাহরণ সামনে চলে আসায় আমরা বলে দিতে পারছি, মুস্তাফিজের উচিত স্টার্ক হয়ে ওঠা।

বলা সহজ; খুব সহজ।

কিন্তু সাতক্ষীরার সবচেয়ে প্রত্যন্ত একটা গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে নতুন জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়া মুস্তাফিজের জন্য এটা ভাবাও কঠিনতম এক কাজ। ইতিমধ্যে ফেসবুকেই একটু যারা চিন্তাশীল, তারা প্রশ্ন করেছেন, মুস্তাফিজ কেনো এই ত্যাগ করবে? কী তার ভবিষ্যতের নিরাপত্তা? কোনো খেলোয়াড়েরই ভবিষ্যত নিরাপদ নয়। সেখানে বাংলাদেশে হিরো থেকে জিরো হতে সময় লাগে সবচেয়ে কম।

 মুস্তাফিজ কাল হঠাৎ ফুরিয়ে গেলে চকলেট থেকে মটরসাইকেল, কোনো স্পন্সর পাশে থাকবে না। বিসিবি থাকবে না। তখন কে দেবে তাকে এই জীবন? কেনো সে এই অনিশ্চয়তার পথে যাবে আইপিএলের ৫-৬ কোটি টাকা অবজ্ঞা করে। যে টাকাই পারে তাকে নিশ্চিত ভবিষ্যত করে দিতে!

কী এই প্রশ্নের উত্তর?

অনেকে বিসিবির কাছে উত্তর খুজছেন। বিসিবি আর কী করতে পারে!

আমি মনে করি বিসিবি বরং মুস্তাফিজের ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। মুস্তাফিজের সামনে যখন প্রথম এরকম হাতছানি এলো, সেটা ছিলো পাকিস্তান সুপার লিগ। তখনও একইরকম অবস্থা তার-হাফ ফিট। বিসিবি তাকে আটকালো। বিনিময়ে তাকে একটা ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিলো; যদিও সেই ২০ লাখ টাকা মুস্তাফিজ সম্ভবত এখনও পাননি।

কিন্তু বিসিবি এভাবে কতোক্ষন টাকা দেবে? আইপিএলে মুস্তাফিজের প্রাপ্তি ৫ কোটি টাকার উপরে। এখন তাকে বিশ্রাম দেওয়ার স্বার্থে বিসিবি কি নিয়মিত বছরে কয়েক কোটি টাকা তাকে বাড়তি দেবে?

কতো জনকে দেবে? সাকিবও তো একই ধরণের ‘স্ট্রেস ইনজুরি’ নিয়ে খেলছেন। তাকেও তাহলে টাকা দিতে হবে। আগামী মৌসুমে এই কাউন্টি যখন রিয়াদ, তামিম, তাসকিনকে চাইবে; তাদেরও টাকা দিতে হবে।

এরপর আর একটাই করনীয় থাকে, এনওসি না দেওয়া। বোর্ডের এনওসি না পেলে খেলোয়াড় আইপিএল, পিএসএল খেলতে পারবে না। কিন্তু এরকমভাবে এনওসি আটকালে, তারা তো বেশীক্ষন এই খবরদারি মানবে না।

সম্প্রতি ক্রিকেটারদের আর্ন্তজাতিক সংগঠন ফিকার এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের ৪৯.১ শতাংশ ক্রিকেটার বিভিন্ন এই ফ্রাঞ্চাইজি লিগের টাকার কারণে দেশের ক্রিকেট ছাড়তে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। শঙ্কার কথা হলো, এই দেশ ছাড়তে রাজী হওয়া ক্রিকেটারদের ৫৮.৬ শতাংশই বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের ক্রিকেটার!

    মানে, সোজা কথা, এসব ক্রিকেটার মনে করেন, তাদের ফ্রাঞ্চাইজি লিগ খেলতে না দিলে তারা প্রয়োজনে নাগরিকত্ব বদলে ফেলবেন। বলছি না যে, মুস্তাফিজ তা করবেন। কিন্তু করলে ঠেকাবেন কী করে?

এতোদূর পড়ে ফেলেছেন?

তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, ব্যাপারটা যতো সরল মনে হচ্ছিলো, তা নয়।

এটা টাকা বনাম ক্রিকেটের লড়াই। এক দিকে আইপিএল এবং অন্যান্য লিগ থেকে আসা জীবন নিশ্চিত করে দেওয়া টাকা। অন্যদিকে দেশপ্রেম। এই অসম এক লড়াইয়ে ক্রিকেটারদের নামিয়ে দিয়েছে ক্রিকেটের সিস্টেম।

আপনি আমাকে মিষ্টির হাড়ির সামনে বসিয়ে বলছেন, মিষ্টি না খেলেই প্রেম। এই প্রেম কতোক্ষন টিকবে? কে টেকাবে প্রেম?

হ্যা, একটা কতৃপক্ষ আছে-আইসিসি।

    আইসিসিকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের নতুন এই বাস্তবতা বুঝতে হবে। এটা আর কেবল একটা দেশ, একটা বোর্ডের সমস্যা নয়। এটা ক্রিকেটের এক মহামারী। যে মহামারীর শিকার হয়ে আমরা ইতিমধ্যে গেইলদের মতো অনেক ক্রিকেটারকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হারিয়েছি।

এই হারানোর সংখ্যা কমাতে এখনই মাঠে নামতে হবে আইসিসিকে।

একটা একক নিয়মের মধ্যে আনতে হবে দুনিয়ার সব ফ্রাঞ্চাইজি লিগকে। তাদের জন্য পরিষ্কার ৩-৪ মাসের একটা উইন্ডো রাখতে হবে; যে সময়ে সব আইপিএল-বিপিএল হবে এবং সে সময়ে থাকবে না কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। সকল ফ্রাঞ্চাইজিকে বাধ্য করতে হবে খেলোয়াড়দের পুরো দায়িত্ব নিতে; ইউরোপের ফুটবল ক্লাবগুলো যা করে। খেলোয়াড়দের সাথে লম্বা মেয়াদে চুক্তি করতে হবে। এই সময়কালে তার সকল ভালো-মন্দ দেখার দায় নিতে হবে ক্লাবগুলোকে। এটা হঠাৎ মনে আসা কতোগুলো প্রস্তাবনা।-খেলাধুলা
২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭/ এমটি নিউজ২৪ ডটকম/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে