স্পোর্টস ডেস্ক: ফিল্মমেকার থেকে দুর্দান্ত এক গোলকিপার! ফিল্মমেকার আর গোলকিপার- বিপরীতমুখী দুটি পেশার একজন মানুষ। তিনি হেনস হালডরসন। আইসল্যান্ডের গোলকিপার। বয়স ৩৪। উচ্চতা ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি। উইকিপিডিয়ায় এক নজরে এতটুকু তথ্যই পাওয়া গেল। কিন্তু এই পরিচয়ে পুরোটা চেনা যায় না তাকে। ৯ বছর ধরে সিনেমা নির্মাণই ছিল প্রথম প্রায়োরিটি। মাস সাতেক আগেও বানিয়েছিলেন আইসল্যান্ডের বিশ্বকাপ অভিযান নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক ‘কোক’-এর বিজ্ঞাপন। হেনসের ভাষায়,‘মন ছুঁয়ে ফেলার মতো কিছু করতে চেয়েছিলাম। বিশ্বকাপ তো একটা সফর।মাঠে নেমে হয়ত আমরা এগারোজন খেলব। চেয়েছিলাম কখনও, কোনও মুহূর্তে যেন নিজেদের একা মনে না হয়।’
তিনি একা তো নন। ‘হু হু হু’ ধ্বনির ঢেউ তুলতে আইসল্যান্ডবাসী আছেন তো সঙ্গে। সেদিন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করার পর এখন আলোচনায় হেনস। ম্যাচের নায়ক যাকে বলা হচ্ছে,আইসল্যান্ডের সেই গোলরক্ষক হেনাস হালডারসনকেই। জীবনটাই যেন বদলে গেছে গোলরক্ষক হালডারসনের। যিনি কি-না কিপিং গ্লাভস হাতে নেওয়ার আগেও ছিলেন ফিল্মমেকার।
গত মার্চের শুমারিতে মাত্র তিন লাখ ৫০ হাজার ৭১০ জনসংখ্যার দেশ এই আইসল্যান্ড। ছোট্ট জনসংখ্যার এই দেশে পেশাদার ফুটবলার মাত্র ১১০ জন! তবে তাদের বেশিরভাগই খেলে থাকেন ইংল্যান্ড, রাশিয়া, জার্মানি, স্কটল্যান্ড, ইতালি, তুরস্ক, সুইডেন, বেলজিয়ান লীগে। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলা একাদশের মাত্র একজনই ছিলেন আইসল্যান্ডের ঘরোয়া লীগ খেলা প্লেয়ার। হেনস পেশাদার ফুটবলে এসেছেন মাত্র দুই বছর আগে।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ড রুখে দিয়েছে শক্তিশালি আর্জেন্টিনাকে। সামনে ছিলেন বর্তমান সময়ের সেরা খেলোয়াড়। লিওনেল মেসি। চাপটা মাত্রা ছাড়া হওয়ার কথা। ছিলও। কিন্তু হেনস মস্তিষ্ক, মন পড়তে জানেন দুটোই। তাই অনায়াসেই পড়ে ফেলেছিলেন মেসির মন। ঢুকে পড়েছিলেন মেসির মস্তিষ্কে। রুখে দিয়েছিলেন মেসির পেনাল্টি।
চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস ছিল মনে। নিজের অতীত নিয়ে বলার সময়ও কিছু লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন না, বোঝা গিয়েছিল বছর দুয়েক আগে তাঁর এক সাক্ষাৎকারেই,‘ বিশ্বের অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের মতো আমার ক্যারিয়ারটা এগোয়নি। গত ৯ বছর আমার প্রধান জীবিকা ফিল্ম–মেকিং। কিন্তু আমাদের আইসল্যান্ড দলটাই এরকম। প্রত্যেকেরই অতীতের গল্পটা বেশ আলাদা। বলা যায়, সাফল্যের কোনও সহজ রাস্তা নেই। কোনও লিফ্ট হয় না। সাফল্য পেতে হলে সিঁড়ি ভেঙেই উঠতে হয়। আমাদের দলের সবাই সেটা মানে। আমরা সেভাবেই এগুচ্ছি।’
‘সহজ’ শব্দটাকে আপন করে হাত গুটিয়ে বসে থাকার ব্যক্তি তিনি নন। তাই রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম ব্যতিক্রমের নাম হেনস হালডরসন।
জালের বুনোটগুলো স্পষ্ট ক্যামেরার নিশানায়। আর সেই বুনোট ভেদ করে ততটাই স্পষ্ট তাঁর শরীর, মনের চাঞ্চল্য। দু’হাতে তালি বাজিয়ে, স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে জোড়া পায়ে সামান্য লাফ। তারপর সামান্য ঝুঁকে তৈরি হওয়া।
‘অ্যাকশন’, সাধারণ নিয়মে ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে সংকেত তিনিই দেন। কিন্তু এক্ষেত্রে নীল আকাশের অলিন্দ থেকে অন্য কেউ কি দিলেন? হতে পারে। নাও পারে।