রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ১০:৩১:০৪

বিসর্জনের গল্প

 বিসর্জনের গল্প

সোহেল এমডি রানা
পর্ব-১
দীর্ঘকাল পর প্রকাশ্য দিবালোকে মুবিনের বড় অশ্বস্তি লাগছে। তার কোটরাগত চোখ দু'টি যেনো সইতে পারছে না এত আলো। দূর্বল রোগা শরিরটা নিয়ে হাঁটতেও পারছে না ঠিক মত। মধ্যরাতের মাতালের মত দেহ টালমাটাল ।
এখন বেলা ৩ টা। সামনে একটা চায়ের দোকান। হাই ওয়ের পাশে। দোকানে একজন ছাত্র বয়সের আর তিন চার জন অর্ধ বয়সি ভ্যান চালক বসা।
ভাই, এক কাপ চা হবে, পানি..? । কথাগুলো শেষ করতে পারলো না। গলাটা শুকিয়ে আসছে মুবিনের । দোকানের বয়াম খুলে নিজেই একটা সল্টেড বিস্কুট নিল। গলা দিয়ে তা নামছিল না। পানি পানের সাথে সাথে বিষম খেল।
দোকানদার বলল- ভাই, আপনার আপনজনেরা মনে হয় আপনার কথা স্মরণ করতাছে।
বাক্যটি শেষ না হতেই ঝাঁঝালো কন্ঠে মুবিন বলে উঠলো - আমার কোন আপনজন নাই।
ওর কথা শুনে দোকানের সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাল।
উষ্কখুষ্ক চুল, সাধু পুরুষদের মত মুখ ভর্তি অনেক বড় বড় দাড়ি। উৎসুক লাল দুটি চোখ যেনো হাজার প্রশ্ন আর অভিযোগের ডালি নিয়ে বিস্ফোরণের অপেক্ষায়। গায়ের জামা কাপড়ও পুরোনো আর অপরিস্কার।
চায়ের কাপে শব্দ করে ঘনঘন চুমুক দিচ্ছে মুবিন। আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজন উৎসুক জনতাও ভীড় করছে ওকে ঘিরে। চা শেষ করে টাকা দিবে বলে পকেটে হাত দিলে হাতে পোটলার মত বের হয়ে এল কিছু একটা। ওমনি সব লোক অতি দ্রুত বিল দিয়ে ভয়ে দোকান ত্যাগ করল।
মুবিন কিছুই বুঝতে না পেরে দোকানদারকে জিজ্ঞস করল কি ব্যাপার ভাই? লোকগুলো এতক্ষণ আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। আর হঠাৎ এভাবে পালিয়ে গেল কেন?
দোকানদার বলল -ভাই, আপনের বিল লাগবো না। আপনি তাড়াতাড়ি এইখান থেইক্যা যান গা। নাইলে একটু পরেই পুলিশ আইয়া আপনের ধরবো সাথে আমারেও ধইরা নিয়া যাইব। পুলিশের যে মাইর! টেকা যত কম মাইর তত বেশি। আফনাদের তো টেরনিং দেওয়া। আমরা নিরীহ মানুষ। আমরারে মাইরা লাভ কী? ভাইজান, আপনার পোটলায় কি বুম?
কী আশ্চর্য! আপনি এমন ভয় পাচ্ছেন কেন? পোটলায় বোম থাকতে যাবে কেন? এটায় আমার টাকা পয়সা আর একটা ঘড়ি। আর পুলিশইবা আসবে কেন? আপনাকে আমি মারবো কেন?
মুবিনের কথা শুনে দোকানদার আশ্বস্থ হল। এখন ভয় কিছুটা কেটেছে।
ও তাইলে আপনে জঙ্গী না?
মুবিন বলে -জঙ্গী কী? এই কথা শুনে দোকেনদার আরও আশ্চর্য হয়। বলে তাইলে আফনে কে? আপনে কৈ থেইকা আইছেন? আফনেরে এই এলাকায় আগে দেখচি বইলা তো মনে হয় না।
মুবিন চা বিস্কুটের বিল দিতে গিয়ে বলে একটা বাংলা ফাইভ সিগারেট দেন আর বিলটা নেন। দোকানদার এবার বুঝতে পারছে না কি বলবে, বলে দেশে এহন বাংলা ফাইভ সিগারেট নাই বললেই চলে। ভাইজান, আপনের পরিচয়টা? মুবিন কটমট করে তাকায় আর একটা গোল্ডলিফ ধরিয়ে টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে কাশতে থাকে আর বলে ঢাকা, শাহবাগ যাব গাড়ি পাব কোথায়?
দোকানার আঙুল ইশারা করতেই দেখে একটা গাড়ি। নাম "ওয়েলকাম", ধেয়ে আসছে। বিল মিটিয়ে হাত জাগাতেই গাড়িটি হাল্কা স্লো করে মুবিনকে উঠিয়ে নিল।
(চলমান.....)
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে