সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১৮, ১১:২০:১৪

মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের সামনে ঝাড়ু হাতে এরা কারা?

মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের সামনে ঝাড়ু হাতে এরা কারা?

রাজশাহী থেকে : কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ ভাস্কর্যের পাদদেশে ঝাড়ু মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে।

মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের সামনে এমন কর্মসূচি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। অনেকেই বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কেউ এমন কাজ করতেই পারে না। মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার জন্যই এমন কর্মসূচি করা হয়েছে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় গলায় সনদ ঝুলিয়ে সাদা টি-শার্ট গায়ে ঝাড়ু হাতে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করা হয়। মিছিলে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ ভাস্কর্যের পাদদেশে যায়। সেখানে তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বকুল তার ফেসবুকে লেখেন, ‘এই ঝাড়ু কি আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অমর শহীদদের দেখানো হচ্ছে? না হলে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্যের দিকে ঝাড়ু তাক করা কেন?’

সাংবাদিক এফ এম শাহীন লেখেন, ‘রাজশাহীতে কোটা প্রথাবিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের সামনে ঝাড়ু মিছিল করেছে ২৫ মার্চে! ল্যাঞ্জা লুকিয়ে রাখা যায় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারীরা এমন কাজ করতে পারে না। জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না ত্রিশ লাখ শহীদের দেশে।’

এ বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘কোটা সংস্কারের নামে যদি মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করা হয়, তাহলে সেটা বরদাস্ত করা হবে না। এর পেছনে অবশ্যই কোনও ইন্ধনদাতা আছে যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে কোনও পক্ষের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।’

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ এম শাকিল বলেন, ‘শুরু থেকেই তারা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি তাদের ব্যানারে রেখে এই আন্দোলন করে আসছে। তবে তারা কাদের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করছে, সেটা পরিষ্কার করেনি। ওইদিন তারা হয়তোবা রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছিল। কিন্তু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে সবাই ঝাড়ু উঁচু করে প্রদর্শন করাটা অবশ্যই লজ্জার। এতে মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা তার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি। তারা স্পর্শকাতর জায়গায় এমন না করে অন্য কোথাও এই প্রতিবাদটা করতে পারতো।’

জানতে চাইলে এই আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ মুন্নাফ বলেন, ‘ঝাড়ু ময়লা পরিষ্কার করে। তাই যাদের কারণে সমাজে মেধাবীরা বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে, তাদের অন্তরের ময়লা যেন পরিষ্কার হয়ে যায় এবং তারা যেন আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারে, সেই জন্য আমাদের এই আয়োজন, মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা নয়।’

ভাস্কর্যের সামনের জায়গাটা কেন বেছে নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে সেখানে পেছনের দিকে থাকা কিছু শিক্ষার্থী এটা করেছে, আমরা সামলাতে পারিনি। এর জন্যে আমরা সত্যিই দুঃখিত। আমাদের এরকম কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।’

কর্মসূচির সিদ্ধান্ত কে নিয়ে থাকেন প্রশ্নে মাসুদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের একটি কমিটি করে দেয়। সেখানে আমাকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর কর্মসূচির সিদ্ধান্ত সেই কমিটি নিয়ে থাকে।’
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে