বরগুনা থেকে : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হ'ত্যা মামলায় গ্রেফতার আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জামিনে মুক্ত হওয়ায় খুশি হয়েছেন তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা। মিন্নি বাড়ি এসে পৌঁছালে তারা এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন।
তবে মিন্নি মুক্ত হওয়ায় ক্ষো'ভ প্রকাশ করেছেন রিফাত শরীফের বাবা ও মামলার বাদী আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। তারপক্ষের আইনজীবীরাও দাবি করছেন, মিন্নি মুক্ত হওয়ায় সাক্ষীরা প্রভাবিত হতে পারেন।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হন মিন্নি। এরপর তাকে তার বাবার বাড়ি বরগুনা পৌর শহরের নয়াকাটা-মাইঠা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর দাবি করেন, ‘আমার মেয়ে নিরাপরাধ। তাকে জোর করে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। আমার মেয়ে নির্দোষ; তাই তাকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। আমার মেয়েকে দীর্ঘদিন পর আমাদের কাছে পেয়েছি। এটা আমাদের কাছে ঈদের আনন্দের মতো। মেয়েকে জামিনে মুক্ত করতে পেরে আমরা খুশি।’
তিনি বলেন, ‘শুধু খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, আমার ছেলের মতো জামাইটা আজ আর নেই। আর ওর খু'নিদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আমার মেয়েকে ফাঁসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আমার বেয়াই।’
মিন্নি চিকিৎসার ব্যাপারে কী করা হবে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসু'স্থ। আমরা কয়েক দিনের মধ্যে তাকে বরিশাল অথবা ঢাকা নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাবো।’
মিন্নির মা মিলি আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমি আর কিছুই চাই না। আমার মেয়ের কতো দিন দেহি নাই। এইবার দুই চোখ ভইরা দেখমু। আমার মেয়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মেয়েটার দিকে চোখ তুলে তাকানো যায় না।’
মিন্নির চাচা আবু সালেহ বলেন, ‘সত্যের জয় হয়েছে। ষ'ড়য'ন্ত্রকারীরা মিন্নিকে ফাঁ'সিয়ে খু'নিদের আড়াল করার যে পরিকল্পনা করেছিল, মিন্নির জামিনে মুক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে কিছুটা হলেও তা লাঘব হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে রিফাতের সব হ'ত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনা হোক।’
এদিকে, মিন্নির মুক্ত হওয়া নিয়ে ক্ষো'ভ প্রকাশ করেছেন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট মিন্নিকে নারী বিবেচনায় জামিন দিয়েছেন। জামিন মানেই তার মুক্তি নয়। এই মামলার সুষ্ঠু তদন্তে মিন্নি নিশ্চয়ই দো'ষী হবে। শুধু মিন্নিই নয়, আমার ছেলেকে হ'ত্যার পেছনে যারা জড়িত ছিল, আমি সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘মিন্নি যে কত বড় নাটকবাজ তা কেউ বুঝতে পারবে না। আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ের আগে নয়ন বন্ডের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল; সে বিষয়টি আমাদের কাছে গোপন করছে। আমার ছেলের সঙ্গে বিয়ের পর নিয়মিত নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। নয়ন বন্ডের সঙ্গে পরিকল্পনা করেই আমার ছেলেকে খু'ন করা হয়েছে।’
মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘আমরা আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মিন্নিকে জামিনে মুক্ত করেছি। চার্জশিট হাতে পেলে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই মিন্নিকে এই মামলা থেকেও মুক্ত করবো।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সঞ্জিব দাস বলেন, ‘মিন্নিকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার ফলে এই চাঞ্চল্যকর হ'ত্যা মামলার সাক্ষীরা প্রভাবিত হতে পারেন। আর আসামিরা প্রভাবিত হলে এই মামলায় ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বাদী ক্ষ'তিগ্রস্ত হবেন।’