মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২, ০৯:০৭:৩২

'মোরে ওষুধ কিনে কে দিবে, তোর কবরে মোরেও নে বাবা'

'মোরে ওষুধ কিনে কে দিবে, তোর কবরে মোরেও নে বাবা'

এমটি নিউজ ডেস্ক : ‘ভাইয়া তুই এভাবে আসবি তা কখনও ভাবিনি, তোকে নিয়ে কত স্বপ্ন। ভাইয়া তুই মোগো পড়ালেখার সব খরচ দিতি, বাবা-মার চিকিৎসা করাইতি। যখন যা টাকা প্রয়োজন বলার সাথে সাথে পাঠিয়ে দিতে। ভাইয়া একবার কথা বল।

ভাইয়া তোর সাথে আমিও কবরে যাবো। ’ এমন আহাজরি ইউক্রেনে নিহত হাদিসুরের ভাই তরিকুলের। পাশেই বোন সানজিদা ইসলাম সম্পা। তার দুই চোখ থেকে ঝড়ছে অশ্রু। মা আমেনা বেগম চিৎকার দিয়ে বলছে, 'বাবাগো বাবা, ও হাদিস বাবা তুই একবার মা বলে ডাক দে। বাবা আর মা বলে ডাক দিবে না। ' এক সময় আহাজারি দিতে দিতে অজ্ঞান হারিয়ে ফেলে আমেনা বেগম। বিকেলে পরিবারের স্বজনদের এমন আহাজারি দেখা যায় হাদিসুরের কবরের পাশে।  

বাবা মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার হাদিসুরের বারবার মুর্ছা যেতে যেতে বলছেন, 'বাবা ও বাবা, ও হাদিস বাবা একবার বুকে আয় বাবা। মোরে ওষুধ কিনে কে দিবে। তোর কবরে মোরেও নে বাবা'। এই বলে বারবার ছেলে কবরে মাথা ঠেকাচ্ছে।

এর আগে, সকাল ১০টায়  জানাজা নামাজ সম্পন্ন হয় হাদিসুরের। এ সময় মানুষের ঢল নামে। জানাজার পূর্ব মুহূর্তে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘প্রকৌশলী হাদিসুরের আমরা শোকাহত। সরকার ও আওয়ামী লীগে নেতৃবৃন্দ সবসময় হাদিসুরের পরিবারের পাশে থাকবে। ' এ সময় এক লাখ টাকার চেক দিয়ে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করেন।

হাদিসুর রহমান আরিফের জানাজায় জিএম ক্যাপ্টেন আবু সুফিয়ান বলেন, ‘২ মার্চ বিকেলে রকেট হামলায়া নিহত হয়। ঘটনার কিছু সময় পূর্বে হাদিসুর রহমান আসরের নামাজ পড়ে। এরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার জন্য জাহাজের উপরে চলে আসে। কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই রকেট হামলায় নিহত হয়। ’

জানাজা শেষে দাদা আতাহার উদ্দিন হাওলাদার ও দাদি মোসা. রোকেয়া বেগমের কবরের পাশে দাফন করা হয় হাদিসুরকে। এর আগে, গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে হাদিসুরের লাশবাহী টার্কিশ এয়ারের ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তার লাশ বাড়িতে পৌঁছায় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে।

মা আমেনা বেগম জানান, হাদিসুর রহমানের গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল। বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা মাকে  চিসিৎসা করান। সে সময় হাদিস বাবা মাকে জানান, ঈদের আগেই বাড়িতে ঘর তোলা হবে এবং ঈদের পরেই বাবা মায়ের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করবে।  

হাদিসুর রহমান ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। জাহাজটি তুরস্ক থেকে রওনা হয়ে গত ২২ ফেবুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দর জলসীমায় নোঙর করে। গত ২৪ ফেবুয়ারি থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হলে অলভিয়া বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। গত ২ মার্চ বিকেলে রকেট হামলায় হাদিসুর রহমান আরিফ নিহত হয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে