এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ‘আমার তো চাওয়ার আর কিছু নাই। সারাজীবন কানলেও অগো তো আর ফিরা পামু না। অগো মাংসও এহন মাটিতে মিশে গেছে, তয় হাড্ডিগুলা আছে, এক বছরে হাড়ের কিছু হয় না। আমার পোলা, বউ আর নাতিডার হাড্ডিগুলা চাই আমি’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই বিলাপ করছিলেন বৃদ্ধা ইরাতন বিবি।
গত বছর ২৪ ডিসেম্বর অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান তার ছেলে হাকিম শরীফ, পুত্রবধূ পাখি বেগম ও নাতি নাসরুল্লাহ। তবে ডিএনএ টেস্টে শনাক্ত হলেও তিনি এখন পর্যন্ত বুঝে পাননি মরদেহ। এমনকি এক বছরে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তাও পায়নি মৃতদের পরিবার। তাদের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবনগোলা গ্রামে।
প্রিয়জন হারিয়ে শোকে স্তব্ধ এখন ৭০ বছর বয়সী ইরাতন। তিনি বলেন, ‘আমার পোলা ঢাকায় কাজ করত, বউ ও এক নাতি তার সঙ্গেই থাকত। আমার বড় নাতনি হাফসা ও তার আরও ২ ভাইবোন আমার সঙ্গে বাড়িতে থাকত। হাফসার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় আমার ছেলে ঢাকা থেকে বিয়ের বাজার করে বাড়ি ফিরছিল। সঙ্গে ছিলো বউ ও নাতি নাসরুল্লাহ। তয় তাগো আর বাড়ি ফেরা হইলো না। লঞ্চে পুইড়া ছাই হইয়া গেছে তিনজনই। বাড়িতে তিন নাতি-নাতনি আছে, তাগো ভরনপোষণ দেওয়ার ক্ষমতা নাই আমাগো। আমি লাশের যেটুকু আছে সেই টুকুই চাই। বাড়ির পাশে কবর দিতে পারলে শান্তি পাইতাম।’
ইরাতনের ছোট ছেলে বলেন, ডিএনএ রিপোর্ট পাইছি। কিন্তু আমরা এখনও মরদেহগুলো পাইনি। এমনকি এ পর্যন্ত কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তাও পাইনি। আমি আর আরেক ভাই দিনমজুরি করে যা পাই তা দিয়ে নিজেদের চলতেই সমস্যা হয়ে যায়। তারমধ্যে আমার তিন ভাতিজা-ভাতিজি আছে। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন আমরা যেন মরদেহগুলো পাই এবং সরকারি সাহায্য পাই।
এ প্রসঙ্গে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ইতোমধ্যে আমরা ১৪ মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করেছি। যাদের শনাক্ত করা গেছে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে আর্থিক ক্ষতিপূরণের চেকগুলো প্রস্তুত করা আছে। শিগগিরই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে চেকগুলো দিয়ে দেওয়া হবে।