বরগুনা : বরগুনা জেলায় আড়াই কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে এসব বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে যেতে পারে। বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, টেকসই বাঁধের অভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এসব বাঁধ মেরামত বা টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করায় আমরা এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২২টি পোল্ডারে ৮০৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে বর্তমানে আড়াই কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। জেলার অন্য উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থান ঝুঁকিতে রয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, 'আবারও ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনছি, আমরা নদীপাড়ের মানুষজন বাঁচার উপায় নেই। সিডরের সময় এই এলাকার বাঁধ বলেশ্বর নদে বিলীন হওয়ার পর এখন পর্যন্ত স্থায়ী বা টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।
জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখতে হলে মজবুত বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারণে আমরা নিঃস্বপ্রায়। যতবার ভাঙে ততবার আমরা নতুন বাড়ি-ঘর নির্মাণ করি। যেকোনো সময় নদীতে ভেঙে বিলীন হতে পারে। মানুষের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই।'
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুনভাবে বিষখালী নদীর ভাঙন শুরু হওয়ায় বেতাগী লঞ্চঘাটের পশ্চিম দিকে শহর রক্ষা বাঁধের ওপর নির্মিত পাকা সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। প্রায় প্রতিবছরই উপকূলে আঘাত হানে কোনো না কোনো ঘূর্ণিঝড়। নড়বড়ে শহর রক্ষা বাঁধ এবং বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে সহস্র একর ফসলি জমি। যুগ যুগ ধরে চলা প্রকৃতির এমন নিষ্ঠুরতার পরও মজবুত ও টেকসই শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এ জনপদের মানুষ।
বেতাগী লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, 'বেতাগী শহর রক্ষা বাঁধের ওপর নির্মিত পাকা সড়কের বিভিন্ন স্থানে বিষখালী নদীর ভাঙনে ফাটল ধরেছে। পৌর শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তা না হলে সড়কটি বিষখালী নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।'
আমতলীর আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী গ্রামের আবদুর রহমান বলেন, 'পায়রা নদীর ভাঙনে এখন পর্যন্ত দুবার আমার বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সম্বল বলতে যেটুকু কৃষিজমি ছিল তা নদীর ভাঙনে শেষ হয়ে গেছে।'
তালতলী উপজেলার জয়ালভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, 'মোরা হুনছি বইন্যা আইতেছে। মোগো এলাকায় বইন্যার সময় ঘর-বাড়িতে পানি ডুইক্যা যায়। মোরা এহন ডরে আছি বইন্যার সময় বাঁধ ভাইনগ্যা পানি ডুইক্যা না পড়ে।'
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরগুনা সদর উপজেলার টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, 'যখন কোনো ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কসংকেত দেওয়া হয়, তখন সবার টনক নড়ে। উপকূলের নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারে ১৫-১৮ ফুটের অধিক পানি বৃদ্ধি পায়।
জলবায়ুর প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠার উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেও বাঁধের উচ্চতা কম থাকায় উচ্চ জোয়ারে বাঁধ তলিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। উপকূলের বাসিন্দাদের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য বাঁধের উচ্চতা বাড়ানো দরকার।'
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, 'বন্যার সময় বাঁধের কোথাও যদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সব কিছু প্রস্তুত করে রাখা আছে। আমাদের লোকজন সব সময় মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি, আমরা সব কিছু মোকাবেলা করতে পারব।'