এম জসীম উদ্দীন: ভারতের দিল্লির শিশু সনু ঘরে ফিরছে আজ। দিল্লি থেকে পাচার করে বরগুনার বেতাগীতে আনা শিশুটির দেশে ফেরার খবর গতকাল বুধবার সনুর মা মুমতাজকে দিয়েছেন খোদ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এই সুসংবাদ দেওয়ার পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছেলেকে গ্রহণ করতে সনুর মাকে বিমানবন্দরেও থাকতে বলেছেন। সনুর মায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার খবর পাই ভারতীয় কর্মকর্তারা বরগুনার আদালত থেকে সনুকে জিম্মায় নিয়েছেন। খবরটা আমাদের নিউ সীমাপুর যুগ্গি মহল্লার সবাইকে জানানোর পর এলাকাবাসী খুশিতে মেতে ওঠে।’
মুমতাজ বেগম বলেন, ‘রোজা খোলার পর মহল্লার সবাই মিলে আমরা পয়লা ঈদ (প্রথম ঈদ) করেছি মঙ্গলবার। সবাই মিষ্টি বিতরণ করে এই আনন্দকে উপভোগ করে।’
মুমতাজ বলেন, ‘গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে সুষমাজি (সুষমা স্বরাজ) আমাকে ফোন করে বলেন, “আমি কথা দিয়েছিলাম না যে তোমার ছেলেকে ঈদের আগে ফিরিয়ে এনে দেব! আমি আমার কথা রেখেছি। বৃহস্পতিবার সকালে তোমরা এয়ারপোর্টে থাকবে সনুকে গ্রহণ করার জন্য।”’
ছেলে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে মুমতাজ বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি বাচ্চাকে আর ফিরে পাব। ওপর ওয়ালা এই রোজার মাসে আমার বাচ্চাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, এ জন্য শুকরিয়া। বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার এবং আপনাদের সকলের সহযোগিতা না পেলে এটা সম্ভব হতো না।’
মুমতাজ বেগম বলেন, সনুর সন্ধানদাতা জামাল ইবনে মুসার প্রতি তাঁদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
তিনি বলেন, ‘উনি (জামাল) আমার ছেলের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন, জেল খেটেছেন। এখনো ওনার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা আছে। আমরা ভারত ও বাংলাদেশের সরকারের কাছে বারবার বলেছি তাঁকে যেন সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়। গতকালও আমি সুষমাজিকে আবার এ কথা বলেছি।’ বরগুনার আদালত সূত্র জানায়, সনুকে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব রমাকান্ত গুপ্তর জিম্মায় দিতে গত সোমবার বরগুনার শিশু আদালতে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবু তাহের প্রথমে পাঁচ লাখ এবং পরে এক লাখ টাকা জামানত দেওয়ার শর্ত দেন। এতে রমাকান্ত গুপ্ত সম্মত হননি।
গত মঙ্গলবার ভারতীয় হাইকমিশনের আইনজীবী জামানত ছাড়াই সনুকে দেওয়ার আবেদন করলে আদালত চলমান মামলায় হাজির করার শর্তে তাকে ভারতীয় হাইকমিশনের ওই কর্মকর্তার জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দেন। মঙ্গলবার বিকেলে আদালত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সনুকে গ্রহণ করেন রমাকান্ত গুপ্ত। ২০১০ সালে সনুকে ভারতের নয়াদিল্লি থেকে পাচার করে বরগুনার বেতাগী উপজেলার গেরামর্দন গ্রামের হাসি বেগমের হাতে তুলে দেয় পাচারকারীরা। সনুর ওপর হাসি বেগম অত্যাচার চালাতেন। এর প্রতিবাদ করেন গ্রামের বাসিন্দা ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জামাল ইবনে মুসা। জামাল সনুকে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেন হাসি বেগম।
এসব মামলায় জামাল দুই দফায় ১ মাস ১৯ দিন কারাভোগ করেন। তাঁর চাকরিও চলে যায়। নির্যাতনের শিকার সনু একপর্যায়ে হাসি বেগমের বাড়ি থেকে পালায়। পরে জামাল তাকে খুঁজে বের করে আদালতে তুলে দেন। আদালত সনুকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠান। নিজ খরচে জামাল গত ১৪ মে দিল্লিতে গিয়ে সনুর বাবা-মায়ের সন্ধান পান। এরপর তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জানান। এরপর ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সনুকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর মধ্যে ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে পরীক্ষা করা হলেও সনুর সঙ্গে তার বাবা-মায়ের ডিএনএ মিলে যায়।-প্রথম আলো
৩০ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ