বরগুনা : ভারতের নয়াদিল্লি থেকে পাচার করে বাংলাদেশের বরগুনার বেতাগী উপজেলার গেরামর্দন গ্রামে আনা হয় শিশু সনুকে। পাচারকারীরা তাকে ওই গ্রামের হাসি বেগমের কাছে তুলে দেয়। সনুর বয়স তখন সবে মাত্র পাঁচ বছর। সালটা ২০১৪। সেই থেকে শিশু সনুর ওপর চলে হাসি বেগমের অত্যাচার।
বাবা-মাকে ফিরে পাওয়ার আশায় সনু এ বছর সবগুলো রোজা পালন করছে। তার আশাও পূরণ হয়েছে। আদালতের নির্দেশে ভারতের কিশোর সনুকে অবশেষে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। সনুকে দুই বছর পর ফিরে পেয়ে পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা।
জানা গেছে, সনুর ওপর হাসি বেগমের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একই গ্রামের বাসিন্দা জামাল ইবনে মুসা এর প্রতিবাদ জানান। জামাল গত ২১ মে সনুর বাবা মেহবুব ও মা মমতাজ বেগমকে নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করে সব জানান।
এরপরই ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সনুকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর মধ্যে ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে সনুর সঙ্গে তার বাবা-মায়ের ডিএনএও মিলে যায়।
পরে সনুকে ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব রমাকান্ত গুপ্তর জিম্মায় নিয়ে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সোমবার বরগুনার শিশু আদালতে আবেদন করেন তার আইনজীবী।
আবেদনে আদালতের বিচারক এবং বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবু তাহের প্রথমে পাঁচ লাখ এবং পরে এক লাখ টাকা জামানত দেয়ার শর্ত জুড়ে দেন। এতে রমাকান্ত গুপ্ত সম্মত হননি। ফলে বাবা-মায়ের কাছে সনুর ফিরে যাওয়ার বিষয়টি ঝুলে যায়।
মঙ্গলবার ভারতীয় হাইকমিশনের নিযুক্ত আইনজীবী সঞ্জীব কুমার দাস আবার ওই আদালতে জামানত ছাড়া সনুকে ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন করেন।
আদালত চলমান মামলায় সনুকে হাজির করার শর্তে তাকে ভারতীয় হাইকমিশনের ওই কর্মকর্তার জিম্মায় দেয়ার আদেশ দেন।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সনুকে গ্রহণ করেন রমাকান্ত গুপ্ত। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে বিকেলে পৌঁছেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এক টুইট বার্তায় বলেন, ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন সনুকে নিজেদের জিম্মায় নিয়েছে। সনুকে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সনুকে বরগুনা জেলা জজ আদালতের সামনের চত্বরে আনা হলে সেখানে সনু ও জামাল একে অপরকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জামাল বলেন, আমার ওপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে। আজ সেই কষ্ট ভুলে গেছি। ওকে আমি তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আনন্দবোধ করছি।
সনু বলে, আমার বাবা-মাকে ফিরে পেতে আমি রমজানের প্রথমদিন থেকেই রোজা রাখছি। অবশেষে আমার আব্বি-আম্মিকে ফিরে পেলাম।
৩০ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম