সাইফুর রহমান : অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে ইফতারি। ছবিটি বুধবার দুপুরে বরিশাল নগরের চরকাউয়া খেয়াঘাট থেকে তোলা l প্রথম আলোবুধবার বেলা তিনটা! নৌবন্দর এলাকায় সিটি মার্কেটের পাশে ‘মায়ের দোয়া মিষ্টান্ন ভান্ডার’-এ চলছে ইফতারসামগ্রী তৈরি। এর মধ্যে রয়েছে চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু, ছোলা, বুন্দিয়া, জিলাপিসহ বাহারি রকমের খাবার। তৈরি শেষে সেগুলো এনে দোকানের সামনে রাস্তার ওপর টেবিল পেতে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। এভাবে খোলা জায়গায় খাবার রাখায় তাতে রাস্তার ধুলোবালি পড়ছে। মাছিও ভনভন করছে।
মায়ের দোয়া মিষ্টান্ন ভান্ডারে তখন জিলাপি ভাজছিলেন একজন কারিগর। কী দিয়ে ভাজা হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ময়দা, তেল, চিনি, খাবার সোডা ও হাইড্রোজ (সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড) দিয়ে। ‘হাইড্রোজ’ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, একধরনের মসলা। এটা দিলে জিলাপি দেখতে সুন্দর হয়। ক্রেতারা পছন্দ করেন।
শুধু এই দোকানে নয়, বরিশাল নগরের আরও অনেক দোকানেই জিলাপি তৈরিতে হাইড্রোজ ব্যবহার হয়। একই এলাকার রেস্তোরাঁ ‘হোটেল মা’-এর ব্যবস্থাপক সুমন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা ইফতারি আইটেমে কোনো রং ব্যবহার করি না। তবে জিলাপিতে হাইডোজ দিই।’
হাইড্রোজ সম্পর্কে নগরের শ্রীগুরু ভান্ডারের সুমিত বণিক বলেন, এটা একধরনের রাসায়নিক। এটা রঙের কাজে ও চিনি সাদা করার কাজে ব্যবহার হয়। তবে মানবদেহের কোনো ক্ষতি করে কি না তা তিনি জানেন না।
বরিশাল ডিডব্লিউএফ মেডিকেল অ্যান্ড নার্সিং কলেজের শিক্ষক (প্যাথলজিস্ট) সুদীপ কুমার নাথ বলেন, ইথিলিন গ্রুপ থেকে তৈরি হাইড্রোজ। সাধারণত পাউডার ও তরল দুই অবস্থায় এটি পাওয়া যায়। এটি কিডনির ওপর প্রভাব ফেলে। অনেক সময় মেধাশক্তি দুর্বলও করে দেয়। একই কথা জানান কেমিস্ট ল্যাবরেটরিজের প্রোডাকশন ম্যানেজার কাজল ঘোষও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরে যত নামীদামি রেস্তোরাঁ আছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আছে ছোট ছোট দোকান। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে এগুলো ফুটপাতের ওপর চলে আসে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই খোলা আকাশের নিচে ইফতারসামগ্রী তৈরি করেন। আর যাঁরা দোকানের ভেতর তৈরি করেন, সেগুলোর বেশির ভাগের পরিবেশ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর।
বুধবার সিটি মার্কেট, পোর্ট রোড, ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, বগুড়া রোড, নতুন বাজার, নথুল্লাবাদ, হাসপাতাল রোড, নাজির মহল্লা, সদর রোড, হেমায়েত উদ্দিন সড়ক, ফলপট্টি, চকবাজার, বাজার রোডসহ আরও কয়েকটি এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
বিকেল পৌনে চারটায় বগুড়া রোডে আল বারাকা ইফতারি হাউসে দেখা যায়, তেলের সঙ্গে সাদা কী যেন মেশানো হচ্ছে। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. সুমন হোসেন বলেন, সয়াবিনের সঙ্গে ডালডা মেশানো হচ্ছে। তাতে জিলাপির স্বাদ একটু ভিন্ন হয়। তবে বাস্তবে ওটা ডালডা কি না, তা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
বিকেল সোয়া চারটার দিকে নৌবন্দর এলাকার ‘হোটেল প্রিন্স’-এর কর্মীরা রাস্তার ওপর ইফতারির পসরা সাজাচ্ছিলেন। খোলা খাবারের পাশ দিয়েই চলছিল যানবাহন। তাতে সমস্ত ধুলা খাবারের ওপর এসে পড়ে। মাছিও দেখা গেছে। একই অবস্থা সামান্য দূরে ‘হোটেল নীলাকাশেও’।
আলাপকালে হোটেল প্রিন্স-এর মালিক বাপ্পি দে বলেন, ‘একটু আগে তৈরি হয়েছে, তাই ঢাকা হয়নি। এখনই ঢেকে দিচ্ছি।’ এই বলে একটা পলিথিন এনে খাবার ঢেকে দেন তিনি। বাপ্পি বলেন, ‘খাবার বেশি দিন রাখার জন্য হাইড্রোজ দেওয়া হয়। কিন্তু জিলাপিতে আমরা শুধু খাবার সোডা দিই।’
জেলা মার্কেট মনিটরিং কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী বলেন, রমজান মাস শুরুর এক দিন আগে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন তাঁরা। ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে মানবদেহের ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছু খাবারে যেন ব্যবহার না করা হয়। তিনি বলেন, এ ছাড়া পুরোনো তেল ও বাসি খাবার ব্যবহারের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। -প্রথম আলো
১০ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম