হাসিবুল ইসলাম : মাদারীপুরে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত জঙ্গি গোলাম ফাইজ্জুল্লাহ ফাহিমের দেয়া স্বীকারোক্তি মতে বরিশালে এক আইনজীবীকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই আইনজীবীর নির্দেশনাই মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক রতন চক্রবর্তীর ওপর হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এমনকি বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার বাসিন্দা ওই আইনজীবীর চেম্বারে নিহত ফাহিমসহ ৬ জঙ্গিকে নিয়ে একটি বৈঠকও হয়েছিল বলে শোনা গেছে।
সেই বৈঠকে আইনজীবীর দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী রতন চক্রবর্তীকে হত্যার টার্গেট নেয় জঙ্গিরা। প্রাথমিকভাবে রতন চক্রবর্তীকে চিহ্নিত করতে জঙ্গিদের হাতে একটি ছবিও তুলে দেয়া হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু বরিশালের কোন আইনজীবী এই শিক্ষক হত্যা চেষ্টার ঘটনায় জড়িত এখনও তা নিশ্চিত হতে পারেনি বরিশাল পুলিশ।
তবে সেই আইনজীবী সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানা গেছে। এমতাবস্থায় কথা উঠেছে- বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতিতে জঙ্গির অস্থিত্ব নিয়ে। অবশ্য ঘটনাচক্রে এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলেও অনেকের অভিমত। কারণ এর আগেও বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনকে অর্থ সহায়তা দেয়ার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের ৩ জন আইনজীবীকে আটক করে র্যাব। তাদের বিরুদ্ধে শহীদ হামজা ব্রিগেড নামে একটি জঙ্গি সংগঠনকে এক কোটি আট লাখ টাকা সহায়তা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে বলেও র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তাছাড়া সরকার পতনে রাষ্ট্রবিরোধী চক্রও একের পর এক অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
অবশ্য এও অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষক হত্যাচেষ্টায় বরিশাল জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় এক আইনজীবীই নাকি নেপথ্যে থেকে কাজ করেছেন। তার দেয়া পরিকল্পনায় টার্গেটকিলিং মিশন বাস্তবায়নে কাজ করেছে ফাহিমসহ অন্তত ৬ জঙ্গি। তবে এর সঠিক কোনো তথ্য প্রমাণ না থাকায় তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।
পুলিশের ভাষ্যমতে, শিক্ষককে হত্যা চেষ্টারা সঙ্গে জড়িত সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সদস্য। যদিও পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ফাহিম হিজবুত তাহরিরের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সাথেও সম্পৃক্ত ছিল। তাদের সংগঠনের মূল টার্গেট ছিল বরিশালে অবস্থান নেয়া।
এদিকে গত ১৮ জুন মাদারীপুরে ফাহিমসহ জঙ্গিদের হামলার শিকার কলেজ শিক্ষক রতন চক্রবর্তী ভাগ্যক্রমে জীবন রক্ষা পান। বর্তমানে তিনি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অপরদিকে সেই হামলার ঘটনায় জনতার হাতে আটক জঙ্গি ফাহিম রিমান্ডে থাকা অবস্থায় পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। ওই বন্দুকযুদ্ধ পরবর্তী আনুষ্ঠানিক ব্রিফ করে মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ফাহিমসহ ওই ৬ জঙ্গি শিক্ষক রতন চক্রবর্তীকে হত্যা করতে টার্গেট করেই মাদারীপুরে এসেছিল।
বরিশাল আদালত
তাছাড়া রিমান্ডে থাকাকালীন জিজ্ঞাসাবাদে ফাহিম আরো জানিয়েছে, সেই টার্গেটকিলিংয়ে বরিশালের এক আইনজীবী নেপথ্যে থেকে কাজ করেছে। কিন্তু সেই আইনজীবীর নাম প্রকাশ করার আগেই ফাহিম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। তবে এই জঙ্গি সংগঠনের পরবর্তী টার্গেট বরিশাল জেলা বলেও ফাহিম জানিয়ে গেছে।
তাদের টার্গেট ওই এলাকায় অবস্থান নিয়ে একাধিক নৃশংস ঘটনার জন্ম দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বড় রকমের ধাক্কা দেয়া। পাশাপাশি সেই ঘটনার মাধ্যমে বিশ্বে আলোচনায় আসা। কারণ সম্প্রতি এ সংগঠনটির সদস্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একইভাবে একাধিক ব্যক্তিকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার নজির সৃষ্টি করেছে। এমতাবস্থায় শান্ত বরিশালে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অশান্ত করে তোলার টার্গেট নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ফাহিম নিহত হলেও তার সংগঠনের অপর ৫ সদস্য এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাছাড়া বরিশালের ওই আইনজীবীর শিক্ষক হত্যা চেষ্টার ঘটনায় যোগসূত্র থাকায় ক্রমশই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। বরিশাকে আপাতত অনিরাপদই মনে হচ্ছে। যদিও বরিশাল পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাদারীপুরের শিক্ষক হত্যা চেষ্টার ওই ঘটনার পর কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম বরিশালবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে কাজ করছে। বিশেষ করে এমনটাই ভাষ্য হচ্ছে- বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. হুমায়ূন কবিরের।
অপরদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার (এসি) মো. ফরহাদ সরদারও জানিয়েছেন, সার্বিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি নিহত জঙ্গি ফাহিমের স্বীকারোক্তি মতে শিক্ষক হত্যা চেষ্টার নেপথ্যের নায়ক যে আইনজীবীর কথা উঠে এসেছে তাকেও বাগে আনতে চেষ্টা চলছে। কিন্তু অগ্রগতি কতটুকু এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা শুধুই বলছেন, ‘অপেক্ষা করুন।’ -বাংলামেইল
২১ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এমএম