ভোলা : পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বলে জানিয়েছেন ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা। তবে এবার জাটকা রক্ষা অভিযান সফল হওয়ার কারণেও প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘এ বছর মৌসুমের প্রথম দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যায়নি। তবে বর্তমানে বৃষ্টিপাত বাড়ায় ও নদ-নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। মূলত পানির গভীরতার সঙ্গে ইলিশের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।’
জেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান জানান, ‘এবার জাটকা রক্ষা অভিযানে সফলতার কারণে বেশি ও বড় সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।’
ভোলায় গত দুই সপ্তাহ ধরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ভোলা সংলগ্ন মেঘনা, তেতুলিয়া নদী ও সাগর মোহনায় প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। জেলা সদরসহ বিভিন্ন মাছের ঘাট, আড়ত, পাইকারি ও খুচরা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক ও দর কষাকষিতে মুখরিত হচ্ছে প্রতিদিন। আর দীর্ঘদিন পর জালে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে।
ভোলায় ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ
ভোলা সদর উপজেলার ভোলার খাল, নাছির মাঝি, কোরারহাট, তুলাতুলি, বিশ্বরোড মাছঘাট, দৌলতখান উপজেলার পাতার খাল, লালমোহনের মঙ্গল শিকদার, নাজিরপুর, লর্ড হার্ডিন্স মাছঘাট, চরফ্যাশনের সামরাজ ও বকশী মাছঘাট, বোরহানউদ্দিনের মৃজাকালু মাছ ঘাট, তজুমদ্দিনের স্লুইস মাছঘাট, মনপুরার হাজিরহাট, রামনেওয়াজ মাছঘাটসহ বিভিন্ন ইলিশের মোকামে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মোকামগুলোতে জেলেদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। সারারাত নদীতে মাছ ধরে সকালবেলা ঘাটগুলোতে চকচকে ইলিশ নিয়ে আসেন জেলেরা।
ঘাটে নৌকা অথবা ট্রলার ভেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই হাঁকডাক দিতে থাকেন ব্যাপারিরা। জেলেরা ঝুড়িতে করে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ নির্দিষ্ট গোলায় রাখেন। মুহূর্তের মধ্যেই সেই ইলিশ কিনতে নিলামে ডাক উঠে যায়। স্থানীয় ব্যাপারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যদাতাই সেই মাছ কিনে নিচ্ছেন। মূলত এমন করেই এখান থেকে ইলিশ যায় বরিশাল, চাঁদপুর ও ঢাকায়। আবার অনেক ব্যবসায়ী সরাসরি লঞ্চে বা ট্রাকে করে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় মাছ বিক্রি করে থাকেন। ব্যবসায়ীরা পাইকারিভাবে এখান থেকে মাছ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করে থাকেন।
সদর উপজেলার ভোলার খাল মাছঘাটের আড়তদার মো. আল আমিন জানান, এবার মৌসুমের প্রথম দিকে তেমন একটা ইলিশ না পাওয়া গেলেও বর্তমানে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে মৌসুমের শেষ সময় এসে এবারই সর্বোচ্চ ইলিশের আমদানি ঘটছে ঘাটে। তাই পাইকারি বাজারে দামও অনেকটা কমে গেছে। প্রতিদিন শুধু এই ঘাট থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজারে বড় সাইজের (এক কেজি) ইলিশ হালিপ্রতি কয়েকদিন আগেও সাড়ে চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হতো। সেই মাছ এখন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে পাঁচশ গ্রামের মাছ হালিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১৪০০ টাকায়। ছয়শ থেকে সাড়ে আটশ গ্রামের চারটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৯০০ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে দাম একটু বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।
ভোলায় ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ
এদিকে, জেলার বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুড়ে দেখা গেছে, অন্যান্য মাছের তুলনায় ইলিশ মাছই বেশি। বিক্রেতারা সারি সারি ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বাজারগুলোতে।
শহরের নতুন বাজারে সরেজমিন দেখা যায়, প্রচুর ইলিশ মাছের সরবরাহ। ক্রেতারা পছন্দের ইলিশ কিনতে এক দোকান থেকে ছুটছেন অন্য দোকানে। দাম কম হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন তারা। এবার ফুটপাতে ও শহরের বিভিন্ন গলিতে সাজিতে করে ইলিশ বিক্রি করছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা।
শহরের মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা অধ্যাপক দিলরূবা জেসমিন জানান, তিনি ফেরিওয়ালার কাছ থেকে বড় এক হালি ইলিশ কিনেছেন তিন হাজার ৩০০ টাকায়। তার মতে, দুমাস আগে এর দাম ছিল পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা।
অন্যদিকে, নদীতে ব্যাপক ইলিশ ধরা পড়ায় বরফের চাহিদার বেড়ে গেছে। তাই স্থানীয় বরফকলগুলোতেও ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। বরফকলগুলোর সামনে ইলিশ বোঝাই যানবাহনের লাইন দেখা গেছে। কেউ অন্য জেলায় ইলিশ পাঠাবেন, কেউ নদী-সাগরে বরফ নিয়ে যাবেন ইলিশের জন্য, কেউবা স্থানীয়ভাবে ইলিশ সংরক্ষণ করবেন আবার ঢাকায় প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে ইলিশ পাঠানোর জন্য কেউ কেউ বরফ কিনতে এসেছেন।
শহরের কালীনাথ রায়ের বাজারের শীবুর বরফকলের মালিক শীবু কর্মকার জানান, ১৫ দিন যাবৎ বরফের ব্যাপক চাহিদা তার এখানে। প্রচুর চাপ থাকাতে বরফ বিক্রি করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে ঢাকাগামী লঞ্চ ছাড়ার পূর্ব মুহূর্তে ব্যাপক চাপ সামলাতে হয় তাদের। -বাংলা ট্রিবিউন।
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম