বগুড়া থেকে : পা আছে, কিন্তু হেঁটে চলার শক্তি নেই। জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। হেঁটে চলার শক্তি না থাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয়েছে মায়ের কোলে। সহপাঠিদের সাথে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে।
তাকে ঘিরেই ছিল কেন্দ্রের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি। অদম্য এই শিক্ষার্থীর নাম সাথী খাতুন। সে উপজেলার ভুতবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার্থী।
আজ রবিবার সকালে তাকে কোলে করে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৫ নম্বর কক্ষে বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে আসেন তার মা রিনা খাতুন। পরীক্ষা শেষে আবার তাকে কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান তার মা।
উপজেলার ভুতবাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলাম একজন বর্গাচাষী। রিনা খাতুন গৃহিনী। এই দম্পত্তির ২০০৪ সালে জন্ম নেয় সাথী খাতুন। তিন ভাই বোনের মাঝে সাথী ছোট। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী সাথী। শফিকুল ইসলাম ও রিনা দম্পত্তির এই কন্যা শিশু নিজের দু’পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারে না।
শক্তি না থাকায় বাম হাতটি অচল। ক্ষুদে এই শিক্ষার্থী বড় স্বপ্ন নিয়ে প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে লেখাপড়ার প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন। বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে মায়ের কোলে চড়ে নিয়মিত যাতায়াত করছে সাথী।
উপজেলার ভুতবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধী হলেও মায়ের কোলে চেপে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে সাথী। লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ থাকায় বিশেষ সতর্কতার সাথে তাকে লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পাঠদানের ক্ষেত্রে তাকে সব সময় সুদৃষ্টিতে রাখা হয়েছে।
রবিবার ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সাথী জানায়, মায়ের কোলে চড়ে এক সময় রাস্তায় বের হলে মানুষ বিদ্রুপের চোখে তাকিয়ে থাকতো। লেখাপড়া করার কারণে মানুষ এখন ভালবাসে। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে সমাজের সকলের ভালোবাসায় বেঁচে থাকতে চাই। প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চাই।
সাথীর মা রিনা খাতুন বলেন, মেয়ে প্রতিবন্ধী হলেও মেধাবী শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহের কারণে সব কষ্ট দূর হয়েছে। ভালো ফলাফল নিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারলে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পুরণ হবে। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেক চিকিৎসা করেও সাথীকে সুস্থ্য করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলার ভান্ডারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব মাবুবুর রহমান বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় মায়ের কোলে চেপে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসে সাথী খাতুন। পা থাকলেও হাঁটতে পারে না। প্রতিবন্ধী হিসেবে পরীক্ষায় তাকে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। কালেরকণ্ঠ