বগুড়ার শেরপুরে মহামারী আকার ধারণ করেছে গরুর ক্ষুরা রোগ। চলতি মাসের ২৬ দিনে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত অর্ধশত গরুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পৌরসভাসহ উপজেলার দশটি ইউনিয়নের বিভিন্ন খামার ও কৃষকের প্রায় বিশ হাজার গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণি সম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তাদের পরামর্শে চিকিৎসা দিয়েও এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে জানা যায়, এই উপজেলায় দুগ্ধ গাভী ও ষাঁড়ের মোটাতাজাকরণ প্রায় ছয় হাজার খামার রয়েছে। এসব খামারে দুই লাখ ছয় হাজারের মতো গরু রয়েছে। এছাড়াও প্রায় সব কৃষকের বাড়িতেই গরু রয়েছে। এরমধ্যে সিংহভাগ গরুই কম-বেশি ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়। তবে প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকে সময়মত পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার ফলে এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তাই এখন আর আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
উপজেলার সীমাবাড়ী ইউনিয়নের বেটখৈর গ্রামের খামারি তৌহিদুল ইসলাম বাবু জানান, তার খামারে ষাঁড় ও গাভী মিলিয়ে মোট ১৫টি গরু রয়েছে। বিগত এক মাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে খামারের সব গরুই ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসা দেওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে শুধুমাত্র পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরণের সহায়তা পাননি। এই খামারি আরও বলেন, তার এলাকার প্রায় সব খামার ও কৃষকের বাড়ির গরুর মধ্যে এই রোগ দেখা দিয়েছে। ধীরে ধীরে এই রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি বিগত পনের দিনের মধ্যে তার গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে অন্তত দশটি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
এরমধ্যে বেটখৈর গ্রামের কৃষ্ণা ঘোষের একটি এঁড়ে গরু, আলম মিয়ার একটি বকনা গরু, নাকুয়া গ্রামের হোসেন আলীর একটি বকনা গরু, নিশিন্দারা গ্রামের আশরাফ আলীর একটি গাভী, টাকাধুকুরিয়া গ্রামের নুর মোহাম্মদের একটি ষাঁড় গরু উল্লেখযোগ্য।
উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ঘোলাগাড়ী কলোনী গ্রামের আব্দুল গাফ্ফার বলেন, তার খামারসহ গ্রামটিতে হঠাৎ করেই গরুর ক্ষুরা রোগ দেখা দেয়। এমনকি চারটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। রোগটি মহামারি আকার ধারণ করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কিন্তু প্রাণি সম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে তেমন কোনো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
তবে ক্ষুরা রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই দাবি করে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমির হামজা বলেন, এটি ভাইরাস জনিত রোগ। শীতকালে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। এবারও তাই হয়েছে। এছাড়া এই রোগে গরু মারা যাওয়ার সঠিক পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও এই উপজেলার খামারি ও কৃষকের হাজার হাজার গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বীকার করেন। তবে আক্রান্ত গরুগুলোকে তার দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে মোটামুটি আক্রান্ত সব গরুই সুস্থ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্পের মাধ্যমে সুস্থ গরুগুলোকে ক্ষুরা রোগের প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।