বগুড়া থেকে : বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় বড়নিলাহালী গ্রামে সন্তান লাভের আশায় 'কবিরাজ' দম্পতির প্রতারণার শিকার হয়েছেন অর্ধশত গৃহবধূ। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গ্রেফতার এড়াতে প্রতারক দম্পতি বাড়িতে তালা দিয়ে আত্মগোপন করেছেন।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আইমাপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী মোছা. মৌসুমিসহ (৩০) সাত নি:সন্তান গৃহবধূ অভিযোগ করেছেন, বিয়ের দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তারা সন্তানের মা হতে পারেননি। তারা লোকমুখে জানাতে পারেন, কবিরাজ দম্পতি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুণাহার ইউনিয়নের বড়নিলাহালী গ্রামের জান্নাতুন খাতুন (৭০) ও তার স্বামী সেকেন্দার আলী চৌধুরীর কাছে চিকিৎসা নিলে সন্তান লাভ করা যাবে।
তারা জানান, এ খবরে তারা ওই দম্পতির কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের সবাইকে পাউডার জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। আর এ ওষুধ পানি মিশ্রিত করে খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। চিকিৎসা ফি হিসেবে প্রত্যেকের কাছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। বাড়িতে ফিরে ওই নারীরা ওষুধ সেবন করে। ৩০ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে তাদের পেট ফুলে যায়। এছাড়া অন্ত:সত্ত্বা হওয়ার মতো অনুভব হয়।
এরপর তারা ওই কবিরাজ দম্পতির কাছে গেলে তাদের প্রেগন্যান্সি টেস্ট করানো হয়। এরপর কবিরাজ সন্তানপ্রত্যাশী নারীদের অন্ত:সত্ত্বা হওয়ার সুখবর দেন। ভুক্তভোগীরা জানান, কবিরাজের দেওয়া রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ হলে তারা গাইনি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন তাদের পেটে বাচ্চা নেই। কথিত কবিরাজ দম্পতি তাদের এইচটিসি জাতীয় হরমন খেতে দিয়েছিল।
তা খেয়ে তাদের পেট ফুলে বাচ্চা আসার মতো অনুভব হয়েছে। প্রতারণার শিকার নারীরা প্রতিকার পেতে দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দুপচাঁচিয়া থানার ওসি হাসান আলীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে কবিরাজ দম্পতি জান্নাতুন খাতুন ও সেকেন্দার আলী চৌধুরী বাড়িতে তালা দিয়ে আত্মগোপন করেন।
ওসি জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। সন্তান না হওয়ার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে সরল বিশ্বাসে গৃহবধূরা এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুপচাঁচিয়া উপজেলার বড়নিলাহালী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কবিরাজ দম্পতির বাড়ির দরজায় তালা ঝুলছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আনারুল হক তালুকদার ও গ্রামবাসী জানান, কথিত কবিরাজ জান্নাতুন হাতে বড় লোহার বালা পড়ে ও তার স্বামী সেকেন্দার আলী চৌধুরী কবিরাজের ভাব নিয়ে দীর্ঘদিন এ অপচিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
গ্রামবাসী তাদের এ চিকিৎসা বিশ্বাস না করলেও শুধু দুপচাঁচিয়া উপজেলা নয়; বগুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা ও আশপাশের জেলার নি:সন্তান নারীরা ওই কবিরাজের বাড়িতে ভিড় করেন। তারা বিশ্বাস করে ফি হিসেবে টাকা দিলে তা আত্মসাৎ করা হয়। জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসী প্রতারক কবিরাজ দম্পতিকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।