এমটিনিউজ ডেস্ক : বগুড়ার গাবতলীতে দাদন ব্যবসায়ী ও তার সহযোগীরা এক গৃহবধূকে ধরে নিয়ে গিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত বাঁশ ঝাড়ে বেঁধে রেখে টাকা আদায় করেছে। এই ঘটনায় লোকলজ্জায় ও ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছেন ওই গৃহবধূর স্বামী। ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাবাসী বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই দাদন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার এবং লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পার রানীর পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। আত্মহত্যা করা আব্দুল মালেক (৪০) ওই গ্রামের মৃত হবিবর রহমানের ছেলে। তিনি দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। আজ রবিবার সকালে মালেকের স্ত্রী রিমা বেগম বাদী হয়ে দাদন ব্যবসায়ী গোলজার রহমানসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আব্দুল মালেকের স্ত্রী রিমা বেগম একই গ্রামের দাদন ব্যবসায়ী গোলজার রহমানের কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা ধার নেন। টাকা নেওয়ার সময় দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, চেকের দুটি ফাঁকা পাতা ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি বন্ধক রাখেন। চার মাসের ব্যবধানে ধার নেওয়া ৩৬ হাজার টাকা সুদাসলে লক্ষাধিক হয়েছে দাবি করে তা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন গোলজার।
এলাকাবাসী জানায়, গোলজারের চাপের কারণে টাকার ব্যবস্থা করতে রিমা গত শনিবার গাবতলী সদর ইউনিয়নের উঞ্চুরখী গ্রামে বাবার বাড়ি যাওয়ার জন্য বের হন।
পথিমধ্যে দাদন ব্যবসায়ী গোলজার ও তার কয়েকজন সহযোগী রাস্তায় তাকে একা পেয়ে ধর ধর বলে ধাওয়া করেন। ভয়ে তিনি দৌড়ে একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেই বাড়ির ভেতরে ঢুকে গোলজার ও তার সহযোগীরা তাকে (রিমাকে) ধরে নিয়ে গিয়ে একটি বাঁশঝাড়ে বেঁধে রাখেন।
এরপর গোলজার রিমার বাড়িতে গিয়ে মালেককে টাকা দিয়ে স্ত্রীকে ছাড়িয়ে নিতে বলেন। না হলে তার স্ত্রীকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করিয়ে টাকা আদায় করবে বলে হুমকি দেন। রিমাকে বেঁধে রাখার বিষয়টি তার বাবার বাড়ির লোকজন জানতে পেরে রাত ২টার দিকে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
এদিকে দাদন ব্যবসায়ীরা স্ত্রীকে বেঁধে রেখে অপমান করায় লজ্জা ও ক্ষোভে ওই রাতেই মালেক গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। আজ রবিবার সকালে এই সংবাদ গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। গ্রামবাসী দাদন ব্যবসায়ী গোলজারসহ তার সহযোগীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে পুলিশ গিয়ে মালেকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে এবং অভিযান চালিয়ে দাদন ব্যবসায়ী গোলজারকে গ্রেপ্তার করে।
গাবতলী মডেল থানার ওসি সনাতন চন্দ্র সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আব্দুল মালেকের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ওই ঘটনায় রিমা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় গোলজার রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।