এমটিনিউজ ডেস্ক: শিক্ষার জন্য বয়স বা সমাজ যে কখনও বাধা হতে পারে না তা এবার প্রমান করলেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার বিশাড়দিয়াড় গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বাবু। তিনি ৫০ বছর বয়সে বড় ছেলের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পেয়েছেন সাফল্য। তার ছেলের নাম আসিফ তালুকদার। শুধু তাই নয় তিনি ফলাফলে পেছনে ফেলেছেন ছেলেকে।
সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জাহাঙ্গীর পেয়েছেন জিপিএ-৫ আর ছেলে আসিফের জিপিএ ৩.১১ পয়েন্ট। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিশাড়দিয়াড় গ্রামের শামসুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। ছোটবেলা থেকেই তার পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ। কিন্ত ১৩ বছর বয়সে তার মা-বাবা মারা গেছেন।
তখন তিনি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। অভাবের কারণে আর লেখাপড়া করা হয়নি। কোমল হাতে সংসারের হাল ধরেন। জড়িয়ে পড়েন কৃষি কাজে।
বিশ বছর বয়সে বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে ১ মেয়ে ও ২ ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। বড় মেয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করে। বড় ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। আর ছোট ছেলে কেজি স্কুলে প্লে গ্রুপে লেখাপড়া করছে।
শিক্ষার কোনো বয়স লাগে না। কেবল ইচ্ছা শক্তি, মনোবল আর একটু প্রচেষ্টা পৌছে দিবে গন্তব্যে। এই লক্ষ্য নিয়ে অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে লোকলজ্জার ভয় দুরে ঠেলে নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এই বয়সে পড়াশোনার পথ বেছে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম বাবু। ছেলের সাথে ভর্তি হন মুলতানি পারভীন শাহজাহান তালুকদার (এমপিএসটি) উচ্চ বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখায়। এ বছর একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন বাবা ও ছেলে। পরীক্ষার ফলাফলে বাবা ও ছেলে কৃতকার্য হয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলম বাবু বলেন, সমাজে আর দশজন মানুষের মতো নিজেকেও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যেন পরিচয় দিতে পারি, সেই উদ্দেশ্যেই লোকলজ্জার ভয় দুরে ঠেলে নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এই বয়সে লেখাপড়া শুরু করেছি। এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফলে আমি খুশি। আগামী দিনে ছেলের সঙ্গে এইচএসসিতে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
আসিফ তালুকদার জানান, লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই। বাবার সাথে একসাথে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আমি গর্ববোধ করছি। পরীক্ষায় বাবা ভাল ফলাফল করায় আমি সহ পরিবারের সবাই খুশি হয়েছেন। আমার লেখাপড়ায় বাবা সবচেয়ে বেশী অনুপ্রেরনা দিয়েছেন। আগামীতে বাবার সাথে একই কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপাড়া করে আলোকিত মানুষ হতে চাই।
এমপিএসটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। অদম্য এ ধরণের উদাহরণ সমাজের জন্য খুবই ইতিবাচক। নতুন প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করবে। এই বাবাকে দেখে সাধারন মানুষ লেখাপড়ায় আরও অনুপ্রাণিত হবে বলেও মনে করছি।