রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩, ০৪:৫৮:৫৬

‘ফাটা ডিম’ কিনতে শুরু করেছেন নিম্ন আয়ের মানুষ

‘ফাটা ডিম’ কিনতে শুরু করেছেন নিম্ন আয়ের মানুষ

এমটিনিউজ ডেস্ক: বগুড়ায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ফের দাম বেড়েছে ডিম ও মুরগির। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, পাকিস্তানি ২৮০ টাকা। এছাড়াও পাইকারি বাজারেই ডিমের (লাল) ডজন বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, ডিম ও মুরগির দাম বাড়লেও লাভ হচ্ছে না তাদের।

শনিবার (১২ আগস্ট) বগুড়া শহরের ৩ নম্বর রেলগেট বাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগেও ৪৪ টাকা হালি দামে খুচরা পর্যায়ে মুদি দোকানে ডিম (লাল) বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে সেই ডিম খুচরা বাজারে ৮ থেকে ১০ টাকা বাড়তি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

ডিম ব্যবসায়ীদের দাবি, কোম্পানিগুলো থেকে বাড়তি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি তীব্র গরমে খামারে মুরগি মারা যাওয়ায় ও উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারের ডিমের সরবরাহ অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে।

বগুড়া শহরের ৩ নম্বর রেল ক্রসিং এলাকার ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, শনিবার বাজারে লেয়ার (লাল) মুরগির ডিম ১৫০ টাকা ডজনে পাইকারি বিক্রি হয়। হালিপ্রতি দাম পড়ছে ৫০ টাকা। তবে দুই সপ্তাহ আগেও আগস্ট মাসের শুরুতে এই ডিম পাইকারিতে ১২৮ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছে। ওই সময়ে ডিমের হালি ছিল পাইকারিতে ৪২ টাকা ৮০ পয়সা। তবে মুদি দোকানে এখন প্রতি হালি ডিম (লাল) বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়।

দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় কম দামে ‘ফাটা ডিম’ কিনতে শুরু করেছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শহরের ৩ নম্বর রেলক্রসিং এলাকার দোকানগুলোতে ডিম সরবরাহের সময় প্রতিদিন যেসব ডিম হালকা ফেটে যায়, সেগুলো টেপ দিয়ে জোড়া লাগিয়ে কম দামে বিক্রি করে থাকেন পাইকাররা। এই ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। যা ভালো ডিমের তুলনায় হালিতে ১০ থেকে ১৪ টাকা কম।

দোকান থেকে ফাটা ডিম কিনছিলেন মনসুর আলী। পেশায় ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা মনসুর শহরের চেলোপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তিনি বলেন, দোকানে প্রতি পিস ডিমের দাম ১৩ থেকে ১৪ টাকা। এত টাকা দিয়ে ডিম কেনার সামর্থ্য নেই। তাই ১০ টাকা করে ৩টা ফাটা ডিম কিনলাম। আগে এগুলো (ফাটা ডিম) বিক্রি হতো প্রতি পিস ৬ টাকায়। এখন এগুলোর দামও বেশি।

দত্তবাড়ি এলাকার গৃহবধূ ফারজানা আক্তার বলেন, এসেছিলাম চার হালি ডিম কিনতে। তবে বাড়তি দামে তিন হালি কিনেই বড়ি ফিরছি। আমার স্বামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সব কিছুর দাম বাড়ায় পাতে মাছ-মাংস এখন নেই বললেই চলে। ডিমও এখন ওই তালিকার দিকেই যাচ্ছে।

রেলক্রসিং এলাকার ডিম ব্যবসায়ী উত্তম কুমার বলেন, যারা দাম বাড়িয়ে দেয় প্রশাসন তাদের কাছে যেতে পারে না। ধরে শুধু আমার মতো চুনোপুঁটিকে। আমরা ডিম কিনে দুই-এক টাকা মুনাফা করে ছেড়ে দেই। চাহিদা অনুযায়ী সরবারহ একেবারেই কম। তাই দাম বাড়তি। এতে আমাদের কোনো লাভ নেই। বরং বাড়তি দামে কিনতে গিয়ে আমাদের মূলধন বেশি লাগছে।

বগুড়া শহরের দত্তবাড়ি এলাকার সেলিম এন্টারপ্রাইজের পরিচালক সেলিম রহমান বলেন, সপ্তাহে আমার ডিমের চাহিদা দেড় লাখ পিস। সেখানে সরবারহ পাচ্ছি মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার পিস ডিম। অতিরিক্ত গরমে কিছু মুরগি খামারে মারা গেছে। এছাড়াও উৎপাদনও কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে সরবারহ অর্ধেকরেও নিচে নেমে এসছে। আরও কিছুটা বৃষ্টি হলে গরম কমে যাওয়ার পর দাম নাগালেও মধ্যে চলে আসবে।

মুরগির দামও বাড়ছে: বগুড়ার বাজারে দুই সপ্তাহ আগেও পাকিস্তানি মুরগির দাম ছিল ২৫০ টাকা কেজি। ৩০ টাকা বাড়তিতে এখন কেজি প্রতি পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। এমনকি নিম্ন আয়ের মানুষের মাংসের চাহিদা মেটানোর একমাত্র ভরসা ব্রয়লার মুরগির দামও এখন ডাবল সেঞ্চুরির কাছকাছি। দেড় সপ্তাহ আগেও ১৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া এই মুরগির দাম এখন প্রতি কেজি ১৮০ টাকা।

ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসা আলমাস আলী নামের স্নাতক পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, মাংস বলতে ছাত্রাবাসে এক এই ব্রয়লার খাওয়া পড়ে। তবে দাম যেভাবে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগিও সেই তালিকা থেকে কাটা পড়বে। এভাবে বাড়িত দামে ছাত্রাবাসে খাওয়া দাওয়া করা দিনে দিনে কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

সিয়াম পোলট্রি হাউজের মালিক বেলাল হোসেন বলেন, সব ধরনের মুরগির দাম পাইকারিতে বাড়তি, তাই খুচারও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দামের কম বেশি আমাদের ক্রয়মূল্যের ওপর নির্ভর করে। যেমন কেনা পড়ে তেমন বিক্রি। আমাদের অতিরিক্ত লাভের কিছু নেই। বরং মাঝেমধ্যে লোকসানও হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান চলছে। কোথাও ক্রয়-বিক্রয়ে পার্থক্য দেখলেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে