সোমবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০১:৫০:১০

'ঘুমন্ত বাবাকে এক কোপে খুন করে ছেলে'

'ঘুমন্ত বাবাকে এক কোপে খুন করে ছেলে'

বগুড়া থেকে : বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় হবিবর রহমান ওরফে ধুলু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। নিহত ধুলুর পুত্র আবু হাসান তার পিতাকে হত্যার দায় স্বীকার করে রবিবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
 
জানা যায়, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থানার আটগ্রামের শাহপাড়ায় ২০১৫ সালের ১০ জুন খুন হন ধুলু মিয়া। ওই সময় মামলার আলামতের ভিত্তিতে আত্মহত্যা বলে থানায় একটি ইউডি মালা দায়ের হয়। মামলাটি বগুড়া পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের সহযোগিতায় সিনিয়র এএসপি গাজিউর রহমান তদন্ত শুরু করেন।

তদন্তকালে সন্দেহ হলে নিহত ধুলুর স্ত্রী সন্তানদের গত শনিবার থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পুত্র হাসান তার বাবা ধুলুকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। আবু হাসান বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

পুলিশের কাছে হাসান বলেন, তার পিতা নিহত ধুলু কৃষিকাজ করতেন। ধুলু অত্যন্ত রাগী ছিলেন এবং স্ত্রীসহ সন্তানদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। দুই মেয়ের বিয়ের পর একমাত্র ছেলে আবু হাসানকে (২২) নিয়ে তার সংসার। হাসান পড়ালেখা করতে চাইলেও ধুলু তার পড়াশুনার খরচ দিতেন না। হাসান বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করে এইচএসসি পাশ করে বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজে ডিগ্রী (বিএসসি) শেণিতে ভর্তি হন।

এরপর ২০১৫ সালের ১০ জুন ১ম বর্ষ পরীক্ষার ফরম পূরনের জন্য বাবার কাছে আড়াই হাজার টাকা চান। বাবা ধুলু ছেলেকে ফরম পূরনের জন্য ৫০ টাকা দিয়ে চলে যান। পরে হাসান বাবার ড্রয়ার থেকে আড়াইহাজার টাকা বের করে নিয়ে যান। সকাল ৯টায় ধুলু বাড়ি ফিরে ড্রয়ারে উল্লেখিত পরিমান টাকা কম পান। এ নিয়ে স্ত্রী এবং বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা ছোট মেয়ের উপর চড়াও হন এবং এক পর্যায়ে ধুলু তার বাড়ির দরজা বন্দ করে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেন।

হাসান বেলা ২ টার দিকে কলেজ থেকে বাসায় ফিরে তার মা এবং বোনের কাছে ঘটনা শুনে রেগে যান। তখন বাড়ির উত্তর পাশের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখতে পান তার বাবা ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত বাবার উপর পাশে থাকা হাঁসুয়া (ছোট দাঁ) দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যান তিনি।

পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। শয়ন ঘরটি ভিতর থেকে আটকানো ছিল এবং দেহের কোথাও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। এছাড়া হাসুয়াটি পাশেই পড়ে ছিল। আবার ঘরের উত্তর দিকে যে ফাঁক ছিল সেখানে মাকড়সার জাল থাকায় পুলিশ এটিকে আত্মহত্যা মনে করে একটি ইউডি মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে এটিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হলে রহস্য উন্মোচনে তদন্তে নামে পুলিশ।

বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান জানান, বগুড়া পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের নির্দেশে দুপচাঁচিয়া থানার ওসি নজরুল ইসলাম ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সিরাজুল ইসলামকে সাথে নিযে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে নেমে পড়েন। ধুলুর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে শনিবার থানায় নিয়ে জিঙ্গাসাবাদ করলে রাতে ছেলে আবু হাসান তার বাবাকে হত্যার কারণ ও হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন। রোববার গ্রেফতারকৃত হাসান আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। বিডি প্রতিদিন

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে