এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : একদিকে পরিবারের সবচেয়ে আনন্দের দিন, অন্যদিকে এক অপূরণীয় শোক—এই দুটো অনুভূতি একসাথে বইতে হচ্ছে বগুড়ার এক দরিদ্র পরিবারকে। মেয়ে পাস করেছে এসএসসি পরীক্ষায়, পেয়েছে জিপিএ ৪.৫০। কিন্তু সাফল্যের এই আনন্দ আর ভাগ করে নেওয়া হলো না আদুরীর সঙ্গে কারণ সে এখন কবরে ঘুমিয়ে।
রিকশাচালক মকবুল হোসেন দাঁড়িয়ে মেয়ের কবরে—চোখের পানি সামলাতে না পেরে শুধু বললেন, ‘তুই পাস করেছিস মা, তুই পাস করেছিস। চোখের পানি আর দোয়া সাথেই দিলাম তোকে।’
এমন দৃশ্য সহ্য করার নয়। আদুরীর মা হালিমা বেগম আর বোন সোহাগীর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছিল চারপাশ। তাদের সবচেয়ে ছোট সন্তান, সবচেয়ে আদরের, আর নেই।
এক দিনেই তিনটি অধ্যায়—জন্ম, মৃত্যু, রেজাল্ট। ১০ জুলাই—আদুরীর জন্মদিন, মৃত্যুদিবস এবং এসএসসি রেজাল্ট প্রকাশের দিন। এ যেন নিয়তির নির্মম পরিহাস।
চলতি বছর ক্যাপ্টেন মাল্টিমিডিয়া পাবলিক স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় আদুরী।
পরীক্ষায় সে পেয়েছে জিপিএ ৪.৫০, কিন্তু নিজের সেই সাফল্যের খবর আর জানা হয়নি তার। নদীর স্রোতে হারিয়ে গেল ভবিষ্যৎ।
গত ১০ জুন বান্ধবী রত্নার বিয়েতে অংশ নিতে গিয়েছিল আদুরী সারিয়াকান্দীর দিঘলকান্দী তরফদার পাড়ায়। বিকালে গরমে ক্লান্ত হয়ে কয়েকজন বান্ধবীসহ গোসল করতে নামে বাঙ্গালী নদীতে। হঠাৎ স্রোতের টানে তলিয়ে যায় আদুরী।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর ফায়ার সার্ভিস এসে উদ্ধার করে তার নিথর দেহ।
আদুরীর বাবা বলেন, ‘মেয়ের বিয়ের কথা বলেছিলাম, কিন্তু সে বলত—বাবা, আগে পড়ালেখা করে চাকরি করব, তারপর বিয়ে। আজ রেজাল্ট বের হলো, ভালোভাবে পাসও করল কিন্তু সে নেই।’
মা হালিমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘তোমরা জানো, আমার ময়না পাস করেছে, কিন্তু সে আর এই দুনিয়াতে নেই। ও বলত, মা, আমি পড়ালেখা করে পুলিশ হবো। আজ সব স্বপ্ন শেষ।’
বড় বোন সোহাগী বলেন, ‘আমরা ছিলাম একে অপরের বন্ধু। আজ সে নেই, আমি একা কথা বলি, একা কাঁদি, একা ঘুমাই। তার স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে আছি।’
ক্যাপ্টেন মাল্টিমিডিয়া পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাস খোকন বলেন, ‘আদুরী ছিল মেধাবী, শান্তশিষ্ট ও ভদ্র স্বভাবের ছাত্রী। আমরা এমন এক সম্ভাবনাময় ছাত্রীকে হারিয়ে মর্মাহত।’