শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬, ০৯:০৬:০৬

‘বিছানায় যাকে খুশি তাকে নেব, তুমি চলে যাও’

‘বিছানায় যাকে খুশি তাকে নেব, তুমি চলে যাও’

বগুড়া  নিজের ঘরে তার স্ত্রীকে পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে অনৈতিক কাজে লিপ্ত অবস্থায় দেখার পর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন স্বামী।  এমন সময় স্ত্রী তাচ্ছিল্য করে স্বামীকে বলে উঠেন, আমার বাড়িতে আমি যাকে ইচ্ছা তাকে নিয়ে থাকব।  তাতে তোমার কি? তোমার ভালো লাগলে এসো আর না লাগলে এসো না।

স্ত্রীর কথা শুনে মাথায় আগুন ধরে যায় স্বামীর।  একপর্যায়ে লোহার পাইপ দিয়ে স্ত্রীর মাথায় সজোরে আঘাত করে।  পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায় স্বামী।

ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের ধুনট মোড় এলাকায় খন্দকারটোলা মহল্লায়।

নিহত গৃহবধূর নাম শারমিন আকতার তনি (২৮)। তিনি শেরপুর উপজেলার খন্দকারটোলা মহল্লার জনৈক ব্যক্তির মেয়ে।  

ঘাতক স্বামীর নাম আব্দুল মতিন (৩২)।  তিনি একই উপজেলার তাতড়া গ্রামের বাসিন্দা।  তিনি দুই সন্তানের বাবা।  নির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকায় হেরোইন আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি।  স্ত্রীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন।  

গত ২২ এপ্রিল রাতে স্ত্রীকে হত্যার পর উধাও হয়ে যান মতিন।  পরদিন থানায় মামলা দায়ের হয়। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৪ মে শনিবার তাতড়া গ্রামে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করেন তিনি।  শনিবার ভোরে মতিন তার সন্তানদের দেখতে তাতড়া গ্রামে এলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মতিন জানান, তার স্ত্রীর সঙ্গে খন্দকারপাড়ার জনৈক ট্রাক চালক শামীমের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল।  গত ২২ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে এসে বিছানায় স্ত্রী তনি ও ট্রাকচালক শামীমকে অনৈতিক কাজে লিপ্ত অবস্থায় দেখে ফেলেন।
 
শামীম পালিয়ে গেলে তনিকে এ ব্যাপারে তিনি প্রশ্ন করেন।  তখন তনি তাকে বলেন, তার বাড়িতে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে নিয়ে থাকবেন।  তোমার ভালো না লাগলে এসো না।
 
এ কথায় মতিন ক্ষিপ্ত হয়ে লোহার পাইপ দিয়ে তনির মাথায় আঘাত করেন।  তনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে মতিন ঘরে থাকা চাকু দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন বলে জানান।
 
এরপর দুই সন্তানকে তাঁতরা গ্রামে বাবা-মার কাছে রেখে আত্মগোপন করেন তিনি।
 
বগুড়ার সিনিয়র এএসপি (মিডিয়া) গাজিউর রহমান জানান, শেরপুরের তাঁততা গ্রামের আমজাদ হোসেন মেম্বরের ছেলে আবদুল মতিন (৩৫) প্রায় ৯ বছর আগে প্রেম সূত্রে পার্শ্ববর্তী ধুনট মোড় খন্দকারপাড়া এলাকায় শফিকুল ইসলাম তারুর মেয়ে শারমিন আক্তার তনিকে বিয়ে করে।  তাদের তাসিন (৭) ও তাহনা (৩) নামে দুই সন্তান রয়েছে।
 
তিনি জানান, তারুর মৃত্যুর পর মেয়ে ও জামাই তার বাড়িতে বসবাস শুরু করে।  মতিন মাদকাসক্ত ও কোনো কাজ না করায় স্ত্রী তনির সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
 
গত ২৩ এপ্রিল সকালে শয়ন ঘরে তনির গলাকাটা লাশ দেখে স্বজনরা পুলিশে খবর দেন।  ওইদিন সন্ধ্যায় মতিনের দুই সন্তানকে পুলিশ উদ্ধার করেন।
 
মতিন পলাতক থাকায় ও আলামত দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মতিন জড়িত। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
 
নিহতের বোন তাসমিয়া তন্ময় আকতার শেরপুর থানায় ভগ্নিপতি মতিনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
 
তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরপুর থানার এসআই বুলবুল ইসলাম জানান, দুপুরে মতিনকে স্বীকারোক্তি রেকর্ডে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়।
১৪ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে