রবিবার, ০২ এপ্রিল, ২০১৭, ০৮:২৮:১৯

২৬১ এইচএসসি পরীক্ষার্থী পাবে ৮৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ

২৬১ এইচএসসি পরীক্ষার্থী পাবে ৮৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারে বেসরকারি চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের নামে ২৬১ জন শিক্ষার্থীকে একই মালিকানাধীন ভিন্ন কলেজে ভর্তি করিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সুরাহা হয়েছে।

ছাত্রলীগের আন্দোলনের মুখে অবশেষে কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতারণা করে নেওয়া শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে রাজি হয়েছে। গতকাল শনিবার কলেজের নগরের চকবাজার ক্যাম্পাসে ত্রিপক্ষীয় এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। প্রতারণার শিকার ওই সব শিক্ষার্থী আজ রবিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

জানা গেছে, নগরের বেসরকারি চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ কর্তৃপক্ষ ২৬১ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতারণা করে বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্ষন্ত হাতিয়ে নেয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০১৫-১৬ সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের চট্টগ্রাম সিটি বিজ্ঞান কলেজ, সিটি পাবলিক কলেজ ও সিটি কমার্স কলেজের নামে ভর্তি করায়, যা শিক্ষার্থীরা জানত না। সম্প্রতি তারা এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র তুলতে গেলে বিষয়টি ধরা পড়ে। এই অভিযোগ ওঠার পর অতিরিক্ত টাকা ফেরতের দাবিতে আন্দোলনে নামে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ।

জানা গেছে, বিজ্ঞান কলেজের মাসিক বেতন এক হাজার ৮০০ টাকা হলেও ওই তিনটি কলেজের মাসিক বেতন ৮০০ টাকা। কিন্তু ওই তিন কলেজের নামে ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা করেই আদায় করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য খাতেও অতিরিক্ত ফি আদায় করে বিজ্ঞান কলেজ কর্তৃপক্ষ।

গতকালের বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতারণার শিকার ২৬১ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে আগামী ১০ জুন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ টাকা ফেরত দেবে। প্রত্যেকে পাবে ৩৩ হাজার ২০০ টাকা করে। ’

এদিকে ঘটনাটি জানিয়ে গতকাল ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে গত রাতে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, বিজ্ঞান কলেজে ভর্তির কথা বলে কোটি টাকা লুটপাট করার পর শিক্ষার্থীদের অজ্ঞাতেই একই মালিকানাধীন অন্য তিনটি কলেজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। এবারের এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে গেলে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ কর্তৃপক্ষের এই জালিয়াতি ধরা পড়ে।

গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহযোগিতায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজ ভবনে অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে গণমাধ্যম ও জনসাধারণের সামনে তাদের এই প্রতারণার কথা উত্থাপন করে কলেজ প্রশাসনের কাছে। অতিরিক্ত ফি ব্যতীত এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র না দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপে শত শত পরীক্ষার্থী তাদের প্রবেশপত্র পেয়েছে বিনা খরচে। ওই সময় বিজ্ঞান কলেজের চেয়ারম্যান মো. জাহেদ খানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এর ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুরে কলেজ প্রশাসনের আমন্ত্রণে প্রতারিত শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে প্রতারিত শিক্ষার্থী, নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি ও নগর ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতার বৈঠক হয়।

ছাত্রলীগের দাবির মুখে বিজ্ঞান কলেজ কর্তৃক প্রতারিত হওয়া ২৬১ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর ক্ষতিপূরণ বাবদ জনপ্রতি ৩৩ হাজার ২০০ টাকা করে সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সেই হিসাবে ২৬১ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক সর্বমোট ৮৬ লাখ ৬৫ হাজার ২০০ টাকা ফেরত পাবেন।

বৈঠকে নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের এই ধরনের প্রতারণা খুবই দুঃখজনক। আর এই প্রতারণার ক্ষতিপূরণ অর্থ দিয়ে কখনো সম্ভব নয়। তবু কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতারিত শিক্ষার্থীদের অর্থের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়াকে সাধুবাদ জানাই। ’ তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
০২ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে