শনিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:২৭:২৩

চট্টগ্রামে আ.লীগের ২ নেতার রক্তক্ষয়ী লড়াই, গুলিবিদ্ধ ২৪

চট্টগ্রামে আ.লীগের ২ নেতার রক্তক্ষয়ী লড়াই, গুলিবিদ্ধ ২৪

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব একটা কাছে নয়। তবুও এই নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে চলছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই নেতার রক্তক্ষয়ী লড়াই। যা বন্দুকযুদ্ধে রূপ নেয় বৃহস্পতিবার।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর জানান, সংঘাত এড়াতে বাঁশখালীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও আতঙ্কে পৌরসদরের কোনো দোকানপাট খুলেনি ব্যবসায়ীরা।

ওসি বলেন, বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান এবং আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটনের অনুসারীদের মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া সংঘাত যেন থামতে চাইছে না।

গতকালও চলেছে এ নিয়ে চরম উত্তেজনা। মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে দুই নেতার অনুসারী নেতাকর্মীরা। পুলিশ মোতায়েনের কারণে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্মরণসভাকে কেন্দ্র করে দুই নেতার অনুসারীরা মরণপণ বন্দুকযুদ্ধে মেতে উঠে। এতে একে অপরকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের ২৪ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়।

লাঠি, কিরিচ, দা-খুন্তি ও ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হয় শতাধিক নেতাকর্মী। যাদের মধ্যে ১৮ জন গুলিবিদ্ধ নেতাকর্মীকে রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম। গুলিবিদ্ধ বাকি ৬ জন বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় লোকজন আরো জানান, বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ নিয়ে দুই নেতার দ্বন্দ্ব চরমে উঠে। ফলে বৃহস্পতিবার সৃষ্ট বন্দুকযুদ্ধের একমাস আগেও দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে আরো সংঘর্ষ হয়েছে।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ কবির লিটন আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি প্রকাশের পর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বেসামাল হয়ে পড়েন। কারণ নির্বাচনে জেতার মতো ভোট তিনি পাবেন না। সেক্ষেত্রে দলের সমর্থন ও সাধারণ মানুষ আমার পক্ষে রয়েছেন। ফলে সন্ত্রাসী দিয়ে অস্ত্র দিয়ে আমাদের গুলি করে মারার চেষ্টা করছেন তিনি।

লিটন আরো বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে পৌরসভার সামনে গ্রিনপার্ক কমিউনিটি সেন্টারে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্মরণসভার আয়োজন করেন নেতাকর্মীরা। সেখানে যাওয়ার পথে উপজেলার প্রধান সড়কের পাইরাং এলাকায় দেলাইয়ার দোকানের সামনে সড়ক অবরোধ করে এমপির অনুসারীরা।

আটকের খবর পেয়ে আমার নেতাকর্মীরা ছুটে এলে এমপির অনুসারীরা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এতে আমার ২৪ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। এরপরও পুলিশ পাহারায় আমি স্মরণসভায় যোগ দেই। সেখান থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যায় এমপির অনুসারীরা দা-কিরিচ, লাঠি-সোটা নিয়ে সড়কে অবস্থান নেয়।

এ সময় উত্তেজিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে আরেক দফা সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী গুরুতরভাবে জখম হন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১৮ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে, ৬ জনকে বাঁশখালী উপজেলায় এবং জখমপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুর বলেন, স্মরণসভাটি ছিল অরাজনৈতিক। এটি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কোনো সভা নয়। কারা গুলি ছুড়েছে তা আমাদের জানা নেই। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধা কিংবা হামলা হয়নি।

বাঁশখালী থানার ওসি মো. আলমগীর জানান, বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে অন্তত পাঁচ শতাধিক যুবকের হাতে লাঠি, কিরিচ ও লোহার রড দেখা গেছে। এ সময় আশপাশের এলাকাসহ সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ পাহারায় বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে আব্দুল্লাহ কবির লিটন স্মরণসভায় উপস্থিত হন। সন্ধ্যা ৬টায় স্মরণসভা শেষ হয়।

এরপর ফেরার পথে রাত ৮টার দিকে আবারো সংঘর্ষ হয়। এ সময় আবদুল্লাহ কবির লিটনকে আমরা শহরে পাঠিয়ে দিয়েছি। বাঁশখালী থানার উপ-পরিদর্শক মো. রুহুল আমিন বলেন, সংঘর্ষে শতাধিক রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ গুলি ছুড়েনি। তবে গুলিবিনিময়ের সময় উভয়পক্ষে কয়েকজন আহত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার, রোজিনা বেগম ও ব্যবসায়ী জহিরুল হক বলেন, এ ধরনের বন্দুকযুদ্ধ আগে কখনো দেখিনি। পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা যেভাবে গুলি ছুড়েছে তা হতবাক করার মতো। যুবকদের হাতে কিরিচ, লাঠি, দা ও লোহার রড যা রীতিমতো যুদ্ধের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতি এখনো বিরাজ করছে। দুই নেতার অনুসারীরা এখনো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) একেএম এমরান ভূঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর বাঁশখালী উপজেলায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এমজমিন  

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে