মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম থেকে : ১৯৭১-এ বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা ও পৈশাচিকতার নীরব সাক্ষী ‘চট্টগ্রাম ক্লাব’। অভিজাত এ ক্লাবে বসেই সিনিয়র অফিসাররা বর্বরতা পরিচালনার সব পরিকল্পনা করতেন। শুধু তাই নয়, বাঙালি নারীদের ধরে এনে এখানেই করা হতো পৈশাচিকতা।
এ ক্লাবটি আজ সেই নিষ্ঠুরতার সাক্ষী হয়ে আছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ অতীতকে তুলে ধরতে নানা সাক্ষ্য-প্রমাণ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এখন এ ক্লাবে নতুন প্রজন্ম অবলোকন করতে পারছেন পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এদেশীয় দালালদের অপকর্মের ঘটনা।
এ ক্লাব সম্পর্কে চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম ক্লাবে প্রত্যেক দিনই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তারা বসত। এখানে বসেই তারা বাঙালি ঘায়েলের নানা পরিকল্পনা করতেন। এ ক্লাবে বাঙালি নারীদের ধরে এনে গণধর্ষণ করা হতো। মূলত মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম ক্লাব ছিল হানাদারদের অপকর্ম বাস্তবায়নের প্রধান কেন্দ্র।’
চট্টগ্রাম ক্লাবের ভাইস চেয়ারম্যান মো শাহজাদা আলম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনাদের বর্বরতা থেকে রক্ষা পায়নি ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম ক্লাব। ক্লাবটি দখল করার সময় তারা গুলি করে বহু স্থাপনা ধ্বংস করে। ক্লাবের মূল ভবনের ব্যাংকোয়েট হলের কাচের দেয়াল ক্ষত-বিক্ষত করা জায়গাটি এখনো এর সাক্ষী হয়ে আছে। যা সংরক্ষণ করে রেখেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ’
সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম ক্লাব সাক্ষ্য দিচ্ছে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতার। ক্লাবের মূল ভবনের নিচ তলায় গুলিতে ক্ষত-বিক্ষত কাচ ঘেরা দেয়ালটি এখন বর্বরতার চিহ্ন হয়ে আছে। স্থানটিতে লাল হরফে লেখা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক সেনাদের ধ্বংস ও বর্বরতার চিহ্ন’। ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা চট্টগ্রাম ক্লাব দখল করে নেয়। তারা ১ নম্বর কটেজের দৃষ্টিনন্দন কাচের গ্লাস ও স্থাপনার ওপর শেল ও গুলি চালায়। ধ্বংস করে দেয় এসব।
ক্লাবে থাকা নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট ও নষ্ট করে। এর পরই ক্লাবে আস্তানা তৈরি করে হানাদাররা। সেনা অফিসারদের নিয়মিত আড্ডার স্থান হয়ে দাঁড়ায় এটি। এ ক্লাবেই তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। ক্লাবে বসেই তারা বাঙালি হত্যা ও নির্যাতনের পরিকল্পনা করতেন। তারা ক্লাবের অনেককিছু ধ্বংস করলেও বারটি রেখেছিল অক্ষত।
কারণ এখানেই তারা আনন্দ-ফুর্তিতে মেতে থাকতেন। সেইসঙ্গে বাঙালিদের ধরে এনে নির্যাতন, হত্যা এবং নারীদের ওপর চালানো হতো পৈশাচিকতা। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত টানা এসব চলেছে। পরে হানাদাররা পালিয়ে যাওয়ার সময় মূল্যবান সব জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। -বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি