শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৫০:৫৫

এবার কে বসছেন মহিউদ্দিনের শূন্য চেয়ারে?

এবার কে বসছেন মহিউদ্দিনের শূন্য চেয়ারে?

নিউজ ডেস্ক: মহিউদ্দিন চৌধুরীর শূন্য চেয়ারে কে বসবেন- এ নিয়ে নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। এরমধ্যে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সস্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে ঘিরে মহিউদ্দিন বলয়, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র একটি বলয় রয়েছে।

দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, এ তিনটি বলয়ে একাধিক নেতা রয়েছেন যাদের বেশির ভাগই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত। এরমধ্যে খোরশেদ আলম সুজন, জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু ও চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী।

আর মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও নঈম উদ্দিন চৌধুরী হলেন সাধারণ সমপাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। এছাড়া ডা. আফছারুল আমীন পৃথক মেরুতে থাকলেও মেয়র নাছির কেন্দ্রিক তাঁর অবস্থান। এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল আফছারুল আমীনের অনুসারী হলেও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে তিনি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখেন। এর বাইরে মাঝখানে রয়েছেন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি।

নেতাকর্মীরা জানান, গত ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দাফনের পর রাতেই তার চশমা হিলের বাসভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। পরদিন ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কর্মসূচিসহ পরবর্তী সাংগঠনিক কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব কে করবেন, সে বিষয়টি বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে।

নেতাদের তিনপক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, আপাতত সাংগঠনিক কর্মসূচিগুলোতে নয়জন সহ-সভাপতির মধ্যে যারা সক্রিয় এবং সভায় যারা আগে আসবেন, তাদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একজন সভাপতিত্ব করবেন। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে পরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতির চেয়ারে বসার বিষয়ে কেন্দ্রের ওপর ছেড়ে দিয়ে বৈঠক শেষ করেন।
নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সমপাদক শফিক আদনান ও প্রচার সমপাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক ওইদিন বৈঠকে অংশ নেন।

এ বিষয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, এসব নিয়ে এখন কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই। আমাদের পুরো পরিবার শোকের মধ্যে সময় পার করছে। নেতাকর্মীরাও এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

তবে এটাই বলবো, আমার বাবা ১৭ বছর চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন। দীর্ঘ একযুগ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। খালেদা-এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের মাঠে তিনিই ছিলেন। নিজ দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। বন্দরসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি, চট্টগ্রামের স্বার্থের প্রশ্নে বারবার রাজপথে দাঁড়িয়েছেন।

নওফেল বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বের রাজনৈতিক মতাদর্শই আমার বাবা আমাকে দিয়ে গেছেন। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই আমি সবার সমর্থন প্রত্যাশা করছি। সবার সঙ্গে সমন্বয় করেই আমি সামনের দিকে এগিয়ে যাব।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর একনিষ্ট অনুসারী নগর আওয়ামী লীগের সাত নম্বর সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আমি অষ্টম শ্রেণি থেকেই মহিউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে রাজনীতি করছি।তার রাজনীতি দিয়েই আমাদের মতো ভাবশিষ্য তৈরি করেছেন। অনুসারীরা মহিউদ্দিন ভাইয়ের ভাবশিষ্য হিসেবে আমাকে ভালোবাসেন। তবে আমি চাই, মহিউদ্দিন ভাইয়ের সুযোগ্য সন্তান নওফেল কেন্দ্রীয় রাজনীতির পাশাপাশি চট্টগ্রামেও যেন হাল ধরেন। আমরা নওফেলকে সহযোগিতা করে যাব।

মেয়র আ জ ম নাছিরকেন্দ্রিক নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি ডা. আফছারুল আমিনের অনুসারী সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, রাজনৈতিক উত্তরসূরী বসিয়ে দেয়ার জিনিস নয়। মহিউদ্দিন ভাই নিজের কর্ম দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কর্মের মধ্য দিয়েই মাঠ থেকে উঠে আসবেন মহিউদ্দিন ভাইয়ের উত্তরসূরী। যিনি উনার আদর্শের লাখ লাখ কর্মীকে নেতৃত্ব দেবেন।

নগর আওয়ামী লীগের চার নম্বর সহ-সভাপতি ডা. আফছারুল আমীন বলেন, নগর আওয়ামী লীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। তবে আওয়ামী লীগের মতো একটা গণসংগঠনের কমিটির মেয়াদ তিন-চার বছর উত্তীর্ণ হওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। দেশের কোনো জেলা কিংবা মহানগরে চার বছরের মধ্যে কমিটি ভেঙে দেওয়ার রেওয়াজ নেই। এ অবস্থায় কেউ একজনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করতে কার্যনির্বাহী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য দলীয় সভানেত্রীর কাছে মত দিতে পারেন।

নগর আওয়ামী লীগের পাঁচ নম্বর সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, কমিটি কি ভেঙে দেয়া হবে নাকি কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হবে তা নির্ভর করবে কার্যনির্বাহী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাদের মতামতের ওপর। তবে কার্যনির্বাহী কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। দলীয় সভানেত্রী এ নিয়ে সিদ্ধান্ত দিলে খুব ভালো হয়।

নগর আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সমপাদক রেজাউল করিম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, সহ-সভাপতিদের মধ্যে অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তাই আমি মনে করছি, কাউকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব না দিয়ে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ডাইনামিক লিডারশিপ তৈরি করা উচিত।

আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সমপাদক এনামুল হক শামীম এ প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সংকট নিরসন করা হবে। কিন্তু এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সহসা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মনে হয় না। এ নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে অন্তত মাস দেড়েক সময় লাগতে পারে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে