এস এম রানা, চট্টগ্রাম : সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়ন থেকে মনিরা তাবাচ্ছুম (ছদ্মনাম) চট্টগ্রাম নগরীতে এসেছিলেন ভালো কলেজে লেখাপড়া করতে। পছন্দের কলেজে লেখাপড়ার সুযোগও পেয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে জুটে সহপাঠী বন্ধু। সোহেল আরমান (ছদ্মনাম) নামে এক বন্ধুর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ফেসবুক।
ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে চ্যাটিং করতে গিয়ে দেখা-সাক্ষাত। এর পর যা হলো, সেখান থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথ পাচ্ছিলেন না মনিরা তাবাচ্ছুম। তাই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য ভালো, আত্মহত্যার চেষ্টা সফল হয়নি। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় কারাগারে যান সোহেল আরমান।
ঘটনার আদ্যেপান্ত শুনিয়েছেন নগর গোয়েন্দা শাখার সহকারী কমিশনার (বন্দর) আসিফ মহিউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘সাতকানিয়ার মেয়ে মনিরা চট্টগ্রামে এসে ভালো কলেজে ভর্তি হন। লেখাপড়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় সোহেল আরমানের সঙ্গে। শুরুতে তারা ফেসবুক মেসেঞ্জারে চ্যাটিং করতো। পরে দেখা-সাক্ষাত হয়।’
তিনি জানান, দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক শুরু হয়। যা অনেকটা প্রেমে রূপ নেয়। প্রেমিক-প্রেমিকা নগরের চকবাজার ‘সিটি হার্ট’ নামক একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দিত। আড্ডার সময়ই অন্ধকারাচ্ছন্ন রেস্টুরেন্টে বসে দুজন কিছুটা ঘনিষ্ঠ সময় পার করেন। আর ঘনিষ্ঠ সময়ের ছবি ধারণ করে রাখেন সোহেল।
দুজনের মধ্যে একপর্যায়ে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। এরই মধ্যে মনিরা তাব্বাচ্ছুমের ফেসবুক ইনবক্সে নিজেদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে তোলা ছবিগুলো পাঠিয়ে দেন সোহেল। সেই সঙ্গে হুমকি দেন, যদি তাঁকে টাকা দেওয়া না হয়, তাহলে আরো অনেক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন সোহেল।
প্রেমিক সোহেলের এমন কথা শোনার পর মাথায় বজ্রাঘাত হয় মনিরার। কিন্তু কোনো উপায় থাকে না। এক পর্যায়ে সোহেলকে কিছু টাকা দেন মনিরা। কিন্তু সোহেল আরো টাকা চান। না হলে ছবি ফাঁস করতেই থাকবে।
সোহেলের এমন প্রতারণা ও চাঁদা দাবির মুখে বিপর্যস্ত হয়ে মনিরা আত্মহত্যার চিন্তা-ভাবনা করেন। সেই চিন্তা থেকে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন মনিরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে পারেননি। ফলে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জেনে যায়।
মনিরাকে বাঁচানোর প্রয়োজনেই তাঁর পরিবার গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে গিয়ে সোহেল আরমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। গোয়েন্দারা অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে দুজনের যোগাযোগের তথ্য, কিছু স্পর্শকাতর ছবি পান। পরে ধরে আনা হয় সোহেল আরমানকে। শুরুতেই সোহেল নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এক পর্যায়ে নিজের দোষ স্বীকার করেন। এরপর মনিরার পরিবার চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় সোহেল আরমানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘটনার বিষয়ে সহকারী কমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ‘চকবাজারসহ কয়েকটি এলাকার অনেক চাইনিজ রেস্টুরেন্ট অন্ধকার করে রাখা হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা ডেটিং করতে যায়। আর ওই রেস্টুরেন্টে বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটিয়ে বিপাকে পড়ছেন তরুণীরা।’
তিনি আরো বলেন, ‘ফেসবুকের বন্ধুকে নিয়ে কেন অন্ধকার কক্ষে ডেটিং করতে হবে? খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত জায়গায় কথা বললে বিপদের ভয় কম থাকে।’
তাঁর মতে, বন্ধুত্ব করা নিয়ে বিশেষ করে তরুণীদের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। না হলে তাব্বাচ্ছুমের মতো ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে আরো অনেককে।-কালের কণ্ঠ