নিউজ ডেস্ক: আদালতে বিচারক ছেলের বিচার কাজ দেখতে গিয়ে দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছেন বাবা। বিচারক ছেলে এজলাসে উপস্থিত হলে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীসহ অন্যদের সঙ্গে তিনিও দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। সোমবার দুপুরে রাজশাহীর সিনিয়র সহকারীর একটি জজ আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
আদালতের বিচারক সাঈদ শুভর আদালতে বিচার দেখতে গিয়ে তার বাবা ইয়াকুব আলী নিজ সন্তানকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। পরে বিচারক সাইদ শুভ এ বিষয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটোস দেন। ইয়াকুব আলী অবসরপ্রাপ্ত একজন স্কুল শিক্ষক।
সোমবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে সাঈদ শুভ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘একজন বিচারকের খাসকামরায় বিচারকের চেয়ারে বসা তার খুব সাধারণ অথচ গর্বিত বাবার স্থিরচিত্র এটি। এই স্থিরচিত্রটি খুবই সাধারণ কিন্তু অনেক কারণে তাৎপর্যমণ্ডিত। গত কয়েকদিন আগে বাবা রাজশাহীতে এসেছেন। আজ আদালতে এসেছিলেন তার সন্তানের বিচার কার্যক্রম স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করতে। নির্ধারিত সময়ের আগে এজলাসে বসে অপেক্ষা করছিলেন। আদালতে বিচারক হিসেবে আসন গ্রহণের সময় খেয়াল করলাম আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে বাবাও দাঁড়িয়ে আদালতকে সম্মান জানালেন। নিয়ম অনুযায়ী আদালত আসন গ্রহণের সময় এজলাসে উপস্থিত আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীসহ সব মানুষ দাঁড়িয়ে আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। বিচারকদের জন্য এটা নিত্যনৈমিত্তিক একটা সাধারণ ঘটনা। কিন্তু যে ব্যাপারটাতে আমার চোখ আটকে গেল সেটা হলো, অন্যরা নিয়ম পালনের স্বার্থে আদালতকে দাঁড়িয়ে সম্মান করলেন। আর বাবার চোখে মুখে যে সম্মানটা দেখলাম সেটা একেবারেই ভেতর থেকে এসেছে; এই সম্মানটা উনি তার নিজ ঔরসজাত সন্তানের প্রতি প্রদর্শন করলেন।’
শুভ আরও লিখেছেন, ‘পৃথিবীর সব বাবাই তাদের সন্তানদেরকে এভাবে সম্মান জানাতে পারলে সবথেকে বেশি খুশি হন। সত্যি বলতে পৃথিবীর কোনো মানুষই কারো কাছে পরাজয়কে মেনে নিতে পারেন না। দুজন মানুষ পরাজয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হন। বাবা ও শিক্ষক এই দুই প্রজাতির মানুষ সন্তান ও ছাত্রের কাছে পরাজিত হতে পেরে সব থেকে বেশি আনন্দিত হন। এই পরাজয় মানে তাদের বিজয়। এই ধরনের বিজয়লাভ করার সুযোগ খুব অল্প মানুষের ভাগ্যে ঘটে। বাবা এবং শিক্ষক হিসেবে স্বার্থক মানুষদের ক্ষেত্রে এটা ঘটে থাকে। সত্যি বলতে এই অধম সন্তানও পৃথিবীতে সব থেকে বেশি সম্মান করে তার পিতাকে এবং তার মাতাকে।’
বিচারক সাঈদ শুভ এর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় কবলিত এক সাইকেল আরোহীকে নিজেই ড্রেন থেকে তুলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন।