চট্টগ্রামে একটি হ'ত্যা মাম'লায় অন্যের হয়ে তিন বছর কা'রাভো'গের পর সদ্য মুক্ত হওয়া নিরপরাধ সেই মিনু আক্তার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহ'ত হয়েছেন। গত ২৮ জুন রাতে নগরের বায়েজিদ সংযোগ সড়কে তিনি নিহত হলেও পরিচয় শনা'ক্ত না হওয়ায় ময়'নাতদ'ন্ত শেষে তাকে দা'ফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। পরে তদ'ন্ত শেষে জানা যায়, তিনি সেই আলো'চিত মিনু আক্তার।
রবিবার (৪ জুলাই) বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চি'ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গত ২৮ জুন রাতে বায়েজিদ সংযোগ সড়ক থেকে দুর্ঘটনায় নিহ'ত এক নারীর ম'রদে'হ উদ্ধা'র করা হয়। পরে তার পরিচয় শনা'ক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় অজ্ঞা'ত হিসেবে ম'রদে'হ দা'ফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। শনিবার বায়েজিদ থানার একটি টিম সীতাকু'ণ্ড এলাকার লোকজনকে ছবি দেখিয়ে মিনুর পরিচয় শনা'ক্ত করে।’
এর আগে গত ১৬ জুন হ'ত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারা'দণ্ডপ্রাপ্ত আ'সামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলি হয়ে তিন বছরেরও অধিক সময় কা'রাভোগ শেষে মিনু চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কা'রাগার থেকে মুক্ত হন।
জানা যায়, মোবাইল ফোন নিয়ে বিবাদের জে'র ধ'রে ২০০৬ সালের ৯ জুলাই নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় পোশাক কারখানার কর্মী কোহিনুর বেগম খুন হন। ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার উপজেলার গৌরস্থান মাঝেরপাড়া গ্রামের আনু মিয়ার মেয়ে কুলসুমীকে গ্রে'প্তার করা হয়। তাঁর স্বামীর নাম ছালেহ আহমদ। তিনি স্বামীর সঙ্গে কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জে সাঈদ ডাক্তারের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম আদালত থেকে জামিন পেয়ে কা'রাগা'র থেকে মুক্তি পান কুলসুমী। পরবর্তীতে এ মা'মলায় বিচার শেষে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত এক রায়ে কুলসুমীকে যাব'জ্জীবন কা'রাদ'ণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কা'রাদ'ণ্ড দেন। রায়ের দিন কুলসুমী আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তাঁকে প'লাত'ক দেখিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়।
এর পর ভাসমান বস্তিতে মিনুকে পান কুলসুমী। মিনুর স্বামী ঠেলাগাড়ি চালক বাবুল সড়ক দুর্ঘ'টনায় মা'রা যাওয়ার পর তিন সন্তান নিয়ে চট্টগ্রামে ভাসমান বস্তিতে থাকতেন। মিনুর বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর জাফারাবাদ এলাকায়। তাঁর পিতার নাম সোলাইমান ও মা সালেহ বেগম, স্বামী মোহাম্মদ বাবুল। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার ময়নামতিতে।
মিনুর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে ইয়াছিন (১২)। সে একটি দোকানের কর্মচারী। আরেকজন গোলাম হোসেন (৭) হেফজখানায় পড়ছে। ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে (৫) দ'ত্তক দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থি'তিতে মিনু ও তাঁর সন্তানদের ভরণপোষণ দেওয়ার প্রস্তাব দেন কুলসুমী। বিনিময়ে একদিন আদালতে হাজির হতে হবে বলে জানানো হয় মিনুকে। আদালতে হাজির হলে তাঁর জামিনও করিয়ে আনবেন বলে প্রতিশ্রু'তি দেওয়া হয়।
মিনু কুলসুমীর কথায় রাজি হয়ে কুলসুমী সেজে ২০১৮ সালের ১২ জুন চট্টগ্রাম আদালতে আ'ত্মসম'র্পণ করেন। এরপর তাঁকে কা'রাগা'রে পাঠানো হয়। সেই থেকে মিনু কা'রাব'ন্দি। এরপর নিম্ন আদালতের সা'জার বিরু'দ্ধে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন কুলসুমী। এ কারণে ওই বছরের ১২ জুন মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ওই মাম'লাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন।
জানা যায়, মিনু কা'রাগা'রে যাওয়ার পর প্রথম প্রথম কয়েক মাস মিনুর সন্তানদের ভরণপোষণ দিলেও কয়েক মাস যেতে না যেতেই মিনুর পরিবারের খোঁ'জ নেওয়া ব'ন্ধ করে দেন কুলসুমী। ওদিকে মিনুর দীর্ঘ হতে থাকে কারা জীবন। মিনুর আর খোঁ'জ নেননি কুলসুমী।
এ অবস্থায় মিনু পু'রো ঘটনা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে ফাঁ'স করে দেন। প্রথম প্রথম কেউ তাঁর কথা না শুনলেও গত ১৮ মার্চ কুলসুমীর পরিবর্তে মিনুর কারাভোগের বিষয়টি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খানের ন'জরে আসে। এরপর তিনি বিষয়টি নিজে অ'নুস'ন্ধান করেন। চট্টগ্রাম কা'রা'গারে থাকা ন'থিতে কুলসুমীর ছবির সঙ্গে মিনুর ছবির মিল খুঁ'জে পায় না কারা কর্তৃপক্ষ।
গত ২১ মার্চ সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান রায় প্রদানকারী চট্টগ্রামের আদালতের ন'জরে আনেন বিষয়টি। এরপর মিনুকে আদালতে হাজির করার নির্দে'শ দেওয়া হলে পরদিন ২২ মার্চ কা'রাগা'র থেকে মিনুকে আদা'লতে হাজির করা হয়। মিনু হাজির হয়ে আদালতকে বলেন, 'তিন বছর আগে মর্জিনা নামের একজন মহিলা ডাল-চাল দেবেন বলে ঘর থেকে ডে'কে নিয়ে জে'লে ঢু'কায় দেয়। আমি তখন ভাস'মান বস্তিতে নিজের ঘরে ছিলাম।'