চট্টগ্রাম : স্বামী ইউরি জ্যাকব ও ছেলে আবেদ আবিলা জ্যাকবের সাথে সুলতানা ভ্যান ডি লিস্ট একটি রেলস্টেশন খুঁজছেন। মনে নেই তার গর্ভধারিণী মায়ের কথা, জানা নেই জন্মদাতা বাবার নামটিও। শুধু জানেন চট্টগ্রামেই তার শেকড় পোঁতা। দীর্ঘ ৩৭ বছর পর স্বজনের খোঁজে চট্টগ্রামে ছুটে এসেছেন নেদারল্যান্ডে বেড়ে ওঠা সুলতানা ভ্যান ডি লিস্ট।
তার মনে আছে শুধু দাদি রহিমা খাতুনের নামটি। শৈশবের স্মৃতি হয়ে আছে চট্টগ্রামের দোহাজারী এলাকার রেললাইন আর রেললাইনের পাশে এক ব্যস্ত বাজার। দাদা-দাদি বেঁচে না থাকলেও ছোট ভাই-বোন এখনো বেঁচে আছে এমন আশা খুঁজছেন তিনি। শেকড়ের টান আর পরিবারের সন্ধান নিতে এখন দক্ষিণ চট্টগ্রামের দোহাজারীর অলিগলি ঘুরছেন তিনি।
একটি রেলস্টেশন, তার পাশে একটি বাজার- ৩৭ বছর আগের আবছা আবছা মনে পড়ে তার। সেই স্মৃতিটুকু সম্বল করে নিজের শিকড় খুঁজছেন তিনি।
সুলতানা স্থানীয়দের সহায়তায় নিজের জন্মস্থান ও হারিয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পাবেন বলে দৃঢ় আশাবাদী।
১৯৭৯ সালের শেষ দিকে নেদারল্যান্ডের একটি আর্ন্তজাতিক সংস্থার কাছে চট্টগ্রামের দোহাজারীর বাসিন্দা রহিমা খাতুন তার চার বছর বয়সী নাতনি সুলতানাকে দত্তক দেয়ার জন্য হস্তান্তর করেন।
এরপরই নেদারল্যান্ডের শহর আইন্দোহ্যফেনের এক নিঃসন্তান দম্পতি দত্তক নেয় তাকে। তার নতুন নাম হয় সুলতানা ফন দে লেস্ত। তাকে ওই এলাকার সবাই সুতানা নামেই চেনে।
নেদারল্যান্ডসের সংস্থাটির কাছে হস্তান্তরের হলফনামার একটি অনুলিপি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন সুলতানা। বর্তমানে পেশায় স্কুলশিক্ষক সুলতানা বলেন, আমি আমার পরিবার সম্পর্কে জানি না। শুধু জানি বাংলাদেশ থেকে আমাকে দত্তক হিসেবে নেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে বাংলাদেশের কারো সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। আমি আমার শিকড় জানতেই বাংলাদেশে এসেছি। আমার স্বামী আমাকে এ বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছে।
সুলতানাকে বাংলাদেশে তার পরিচয় জানার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে স্লোব বাংলাদেশ নামে ঢাকার একটি উন্নয়ন সংস্থা। তাদের সহযোগিতা নিয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন সুলতানা।
তার আনা হলফনামাতে লেখা আছে, সুলতানার জন্ম ১৯৭৫ সালের ৮ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম জেলার তৎকালীন পটিয়া উপজেলার দোহাজারীতে (বর্তমানে চন্দনাইশ উপজেলার অর্ন্তগত)।
এতে দাদি হিসেবে রহিমা খাতুন সুলতানার ভরণ-পোষণ চালাতে না পারা এবং তার বাবা-মা উভয়ই মারা যাওয়ার কারণ দেখিয়ে দত্তকের জন্য হস্তান্তরের কথা উল্লেখ রয়েছে। এতে রহিমা খাতুনের স্বামীর নাম উল্লেখ রয়েছে মৃত কদম আলী।
সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা হবে কি না জানেন না তিনি। তবে আশাবাদী।
নেদারল্যান্ডে স্বামী-সন্তান নিয়ে কেমন কাটছে এমন প্রশ্নের জবাবে সুলতানা বলেন, আমি খুব সুখী। পরিবারের সব সদস্যই জানে- আমি বাংলাদেশ থেকে দত্তক হিসেবে এসেছি। এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
নেদারল্যান্ডে প্রাইমারি স্কুল টিচার হিসেবে কাজ করছেন সুলতানা। তের বছর আগে পরিচয় পেশায় ডিজাইনার ইয়োরিস ইয়াকবসের সাথে। সেখান থেকেই প্রেম এবং আট বছর আগে বিয়ে হয় তাদের।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার সুলতানা, তার স্বামী-সন্তানকে নিয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারীতে যাবেন, খুঁজবেন তার জন্মস্থান, পরিবারের সদস্যদের। সোমবার নেদারল্যান্ড থেকে আসা সুলতানা ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
৪ ফ্রেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম