মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন: গ্রামীন সংস্কৃতি, গৌরবজ্জল ইতিহাস-ঐতিহ্য আর মনোরম প্রাকৃতিক শোভায় রুপসী বাংলার অপরুপ মনকাড়া সৌন্দর্যে গড়া মিরসরাই উপজেলা। আমাদের হাতের নাগালেই রয়েছে অনেক সুন্দর ছোটখাটো বেড়ানোর জায়গা , কিন্তু তাদের ঠিকানা রয়ে গেছে অজানা। অপার সৌন্দর্যমন্ডিত পর্যটন স্থান গুলো দেখে যে কেও বিমোহিত হবেন।
মুহুরী প্রজেক্টের সুবিশাল জলরাশি:
টুইটুম্বুর মুহুরীর জলাধার থেকে সৃষ্টি হওয়া জলপ্রপাত দেখতে অপরুপ মুহুরী প্রকল্প দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমায় অনেক দর্শনার্থী। প্রকল্পের মূল গেইটে এক পাশ থেকে অপর পাশ্বে গড়িয়ে পড়া জলরাশি সৃষ্ট জলপ্রপাত দেখতে সত্যিই অনন্য। জোয়ারের পানি যখন উথলে ওঠে তটরেখায় তখন আছড়ে পড়ে ছোট বড় ঢেউ, তখন এক অপরূপ সৌন্দর্য বিকশিত হয় মুহুরী প্রজেক্টে। সানাগাজী মুহুরী প্রজেক্টের অপরূপ দৃশ্য শেষ বিকালের সূর্যের আলো যখন মুহুরী প্রজেক্টের বেলাভূমিতে পড়ে, তখন দূর থেকে মনে হয় পুরো প্রকল্পটি যেন একটি পর্যটন কেন্দ্র। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চাদরে ঢাকা এ প্রকল্পটিতে নদী আর সাগরের জল আছড়ে পড়ছে। চিকচিক বালিতে যেন সকালের মিষ্টি রোদ আলো ছড়ায় আর অস্তগামী সূর্যের লালিমা মাখা অনন্ত মায়া যেন ঢেলে দেয় দিগন্তজুড়ে। অপরূপ মুহুরী প্রজেক্ট স্বর্ণালী স্বপ্নের মতোই বর্ণিল শোভায় ঘেরা। প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে এ প্রকল্পটি। মুহুরী প্রজেক্টের রেগুলেটরের ৪০ দরজায় একসাথে যখন পানি প্রবাহ আরম্ভ হয় তখন কেবল সোনাগাজী মুহুরী প্রজেক্টের অপরূপ দৃশ্যশোনা যাবে শোঁ শোঁ আওয়াজ। সেসাথে হিমেল হাওয়ার মৃদু ছোয়া সব মিলিয়ে অন্যরকম এক রোমাঞ্চকর ভালো লাগার অনুভূতি। মুহুরী সেচ প্রকল্পকে ঘিরে গত আড়াই দশকে গড়ে ওঠে বিনোদন ও পিকনিক স্পট । শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে ভ্রমণ পিপাসু লোক এবং পর্যটক বেড়াতে আসে। মুহুরীর জলরাশিতে নৌভ্রমণের সময় খুব কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস এবং প্রায় ৫০ জাতের হাজার হাজার পাখির দেখা পাওয়া যায় ।
কিভাবে যাবেন: ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই এলাকার জোরারগঞ্জ বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি পশ্চিম দিকে চলে গেছে, সেটিই সহজতর ও একমাত্র রাস্তা। জোরারগঞ্জ হতে প্রজেক্ট পর্যন্তর্ মাত্র আধাকিলোমিটার রাস্তাতেই রয়েছে নিয়মিত সার্ভিস। জোরারগঞ্জ হতে প্রজেক্ট রোড়ে ৭ কিঃমিঃ চলার পর প্রকল্পের দীর্ঘ ড্যামের (বাঁধের) পূর্ব পযন্ত পৌঁছা যাবে।
প্রাকৃতিক নৈসর্গে ভরা মহামায়া লেক:
যে-ই এখানে আসছে হচ্ছে বিমোহিত। বিমুগ্ধচিত্তে সে প্রকৃতির কোলে নিমজ্জিত হচ্ছে ভিন্ন সত্তায়। রূপরানী চট্টলার প্রবেশদ্বার মীরসরাইতে গড়ে ওঠা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহামায়া লেকে সম্প্রতি দর্শনার্থীদের এখন ভিড় বর্ণনাতীত । প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার লেকের জলে অনেকে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ ছাড়া অতিথি পাখি, পান কৌড়ি দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে। যে যার মতো ছোট্ট ডিঙ্গি কিংবা সপরিবারে বড় নৌকা নিয়ে লেকে সারাবেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকে ছুটে যাচ্ছে গহিন বনের নানা দৃশ্য অবলোকন করে ঝরনা দেখতে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে দেখা মিলতে পারে সাত রংয়ের অপূর্ব রংধনু। ছোট ছোট স্পীড বোটে করে ১০-১৫ জনের একটি দলবেঁধে ঢেউহীন নীলাকার পানিতে ঘুরতে খুব ভালোলাগে। যতই দেখে ততই যেন সুন্দরের ছায়ায় মুগ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা।এছাড়াও পাহাড়ের উপরে উঠে সাবাই গোলাকার করে বসে আড্ডাটাই যেন আর বেশি ভালো লাগে উঁচু থেকে তাকালেই যেন মনে হয় সমতল ভুমি কত নীচে। হঠাৎ ভয় লাগলেও আনন্দের ধারায় তা ভুলে গিয়ে উচ্চাসে মেতে উঠে সবাই।এখানে যে কেউ এসে সারাটাদিন মহাআনন্দে কাটাতে পারেন।
কিভাবে যাবেন: মীরসরাই বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি অটোরিক্সা বা অন্য কোন বাহনে ঠাকুরদিঘী বাজারে এসে পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে মহামায়ায় প্রবেশ করতে হয়। সেখানে মহাসড়কের পাশেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাইনবোর্ড। প্রকল্প থেকে মহাসড়ক থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার পূর্বদিকে পাহাড়ের কোলেই এই মহামায়া লেক।
আট স্তরের খৈয়াছড়ার বুনো ঝর্না:
ঝম ঝম শব্দে বয়ে চলা ঝর্নাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে ফেলে সজীব করে তার নাম খৈয়াছরা ঝর্না। যারা একবার খৈয়াছরা ঝর্না দেখেছেন তাদের মনে একটিই প্রশ্ন উঁকি দেয় বার বার ‘দেশে এমন সৌন্দর্যের ঝর্না দ্বিতীয়টি আর আছে কিনা’। এমনই এক নান্দনিক ঝর্না পর্যটকদের আকর্ষন করছে যা খৈয়াছরা ঝর্না নামেই পরিচিত। এখানে আসা অনেক পর্যটকের মতে, ‘দেশের মাধবকুন্ড ও শুভলং ঝর্ণার থেকেও বেশি রূপ এটির। খৈয়াছরা ঝর্নার মোট আটটি ধাপ। বেশিরভাগ পর্যটক প্রথম ধাপের সৌন্দর্য্য দেখেই মাতোয়ারা। পাহাড়ের উঁচুতে হওয়ায় বাকী ধাপগুলোতে যাওয়া কিছুটা কষ্টকর বলে অনেকেই ঝর্নার প্রথম ধাপের সৌন্দর্য্য দেখেই ফিরে আসেন। অনেক প্রশস্ত জায়গা জুড়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে শেষ ধাপে। ঝর্নার শেষ ধাপ পর্যন্ত যারা আসবেন তারা বাংলাদেশের সেরা কোন প্রাকৃতিক ঝর্না উপভোগ করবেন নিঃসন্দেহে। খৈয়াছড়ার বৈশিষ্ট্য হলো অন্যান্য ঝরনার মতো এটি সরাসরি ওপর থেকে নিচে এসে পড়েনি। ঝরনাটির মোট সাতটি (কারো মতে নয়টি) ধাপ আছে। এর মধ্যে নিচ থেকেই দেখা যায় তিনটি ধাপ, ওপরের চারটি ধাপ দেখতে হলে বাম পাশের প্রায় খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে আরো শখানেক ফুট ওপরে।ওপরে উঠলে দেখা মিলবে আরো একটি ধাপের। এর বাম পাশ দিয়ে সামান্য হাঁটলেই দেখা মিলবে অপর তিনটি ধাপের। এতেও যদি আপনার মন না ভরে তাহলে এই তিনটি ধাপের পাশ দিয়ে পাহাড় বেয়ে উঠে যান আরো ওপরে। ঝরনায় যাওয়ার রাস্তায় দুই পাশের রাস্তায় দেখা মিলবে ঘুঘু, টিয়া, কাঠঠোকরাসহ হরেক রকম পাখপাখালির।
কিভাবে যাবেন: মীরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে খৈয়াছড়া ঝরনার অবস্থান। এর মধ্যে এক কিলোমিটার গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ পায়ে হেঁটে যেতে হবে।
পাখির কলতানে মুখর বাওয়াছড়া:
পাহাড়িয়া সবুজ গাছের সমারোহ অতিথি পাখিদের কলতান কার না মন জুডায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কেউ মুগ্ধ হবেন বাওয়াাছড়া দেখে। নীল আকাশের বিশালতার নিচে সবুজের সমারোহ। দুই পাশে থাকা বনাঞ্চলের দিকে তাকালে হয়তো সহজেই দেখা যাবে জীববৈচিত্র। মনোমুগ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চাদরে ঢাকা প্রকল্পটিতে ঝর্নার পানি আছড়ে পড়ছে। চিকচিক বালুতে যেন সকালের মিষ্টি রোদ আলো ছড়ায় আর অস্তগামী সূর্যের লালিমা মাখা অনন্ত ছায়া যেন ঢেলে দেয় দিগন্তজুড়ে। পশ্চিমে অজগরের মতো রেললাইন, পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশ, সারি সারি গাছ আর দু'পাশে থাকা বনাঞ্চলের দিকে তাকালে হয়তো সহজেই দেখা যাবে অনেক জীববৈচিত্র্য। শেষ বিকালে সূর্যের লালরশ্মিতে ঝরনা আর লেকের পানিতে স্বর্ণালী রোধের বর্ণালী চিত্র পরিবর্তনের চোখধাঁধানো সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হবে। আর এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন শত-শত প্রকৃতিপ্রেমী ছুটে আসছে বাওয়াছড়ায়।অপরূপ বাওয়াছড়া স্বর্ণালি স্বপ্নের মতোই বর্ণালি শোভাঘেরা সৌন্দর্যপিপাসু পর্যটন। কিভাবে যাবেন ঃ চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাইয়রে ছোট কমলদহ বাজার থেকে দেড় কিলোমিটর পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে এ স্পটের অবস্থান।
২৭ এপ্রিল,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস