গাজী ফিরোজ: দেয়ালে হিমাদ্রী মজুমদারের একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি টাঙানো। মা গোপা দাশ মজুমদার দিনে কতবার যে এই ছবির দিকে তাকান তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মা বলেন, ‘সারা দিন ছেলের ছবি দেখি। আশায় থাকি হত্যাকারীদের বিচার হবে। চার বছর ধরে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। কাঁদলেও এখন আর চোখে পানি আসে না।’ চট্টগ্রাম নগরের হেমসেন লেন এলাকার নিজ বাসায় গোপা দাশ মজুমদার বলেন, ‘হিমাদ্রীর একটা গিটার আছে। কিন্তু এতে আর সুর ওঠে না। সেও আমাকে গান শোনাতে আসে না।’ চট্টগ্রামে কুকুর লেলিয়ে মেধাবী ছাত্র হিমাদ্রী মজুমদার হত্যার চার বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। বিচারে অপরাধীদের সাজা হবে, সে আশায় দিন কাটছে পরিবারটির। ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল পাঁচলাইশের একটি ভবনের পাঁচতলার ছাদে নিয়ে হিমাদ্রীকে মারধরের পর তার ওপর হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই বছরের ২৩ মে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যায় এ লেভেলের শিক্ষার্থী হিমাদ্রী। লেখাপড়ার পাশাপাশি হিমাদ্রী মাদকবিরোধী সংগঠন ‘শিকড়’-এর সদস্য ছিল। পাঁচলাইশ এলাকাভিত্তিক এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাবিদ আলী চৌধুরী বলেন, এলাকায় মাদকের বিস্তার রোধে কাজ করায় হিমাদ্রীকে কুকুর লেলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি হিমাদ্রী হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী।
এই মামলার বিচার প্রথমে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে চলছিল। চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে এটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত ১৩৫ কার্য দিবসে বিচার শেষ না হওয়ায় মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজের আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এখন চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলামের আদালতে মামলার যুক্তিতর্ক চলছে। সর্বশেষ ১৮ মে শুনানির দিন ধার্য থাকলেও শুনানি হয়নি। আজ মঙ্গলবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এই মামলায় ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্যই নিয়েছেন আদালত।
হিমাদ্রী হত্যার ঘটনায় তার মামা অসিত দে বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আসামিরা হলেন ব্যবসায়ী শাহ সেলিম ওরফে টিপু, জুনায়েদ রিয়াদ, শাহাদাত হোসাইন, জাহিদুল ইসলাম ওরফে শাওন ও মাহাবুব আলী খান ওরফে ড্যানি। আসামিদের মধ্যে শাহ সেলিমের ছেলে জুনায়েদ। মামলায় জামিনে রয়েছেন শাহ সেলিম ও শাহাদাত হোসাইন। পলাতক রয়েছেন জুনায়েদ রিয়াদ ও জাহিদুল ইসলাম। কারাগারে আটক রয়েছেন মাহাবুব আলী। জানতে চাইলে চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি অনুপম চক্রবর্তী বলেন, যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হওয়ার পর আদালত রায় ঘোষণার দিন ধার্য করতে পারেন। মামলার আসামি শাহ সেলিম নিজেকে ও তাঁর ছেলেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। নিহত হিমাদ্রির বাবা প্রবীর মজুমদার বলেন, চার বছর হলেও ছেলে হত্যার বিচার পাইনি। আসামিপক্ষ ধার্যদিনে একের পর এক সময়ের আবেদন করে মামলার বিচারপ্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে। দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি করে অপরাধীদের সাজা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।-প্রথম আলো
২৪ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ