চট্টগ্রাম : একশ’ টন জরুরি ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে শ্রীলংকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বঙ্গবন্ধু’। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় জাহাজটি শ্রীলংকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম নৌ জেটি ত্যাগ করে। ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধ্বসসহ আকষ্মিক বন্যায় সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদশের পক্ষ থেকে এই ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রীসমূহের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, ওয়াটার পিউরিফায়ার, ওষুধ, বস্ত্র, তাঁবু, জেনারেটর ইত্যাদি।
এর আগে এরিয়া কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল রিয়ার এডমিরাল আখতার হাবীব উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রেস ব্রিফিং করেন।
এ সময় ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, এয়ার কমডোর এ এইচ এম ফজলুল হক ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের বেসামারিক ও সামরিক সংযোগ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর নাজমুল হাসান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলংকান হাইকমিশনার ইয়াসুজা গুনাসেকারাসহ নৌবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতাগণ উপস্থিত থেকে জাহাজটিকে বিদায় জানান।
বানৌজা ‘বঙ্গবন্ধু’
বানৌজা ‘বঙ্গবন্ধু’ দ্রুততম সময়ে প্রায় ১৪০০ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রপথ অতিক্রম করে আগামী ৪ জুন শ্রীলংকা পৌঁছাবে এবং রাজধানী কলম্বিয়াতে অবস্থান করে পরবর্তী তিন দিন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করবে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যেকোনো পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সময় পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তা মোকাবেলার সক্ষমতা জাহাজটির রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নৌবাহিনী জাহাজ বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে জরুরি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের এ উদ্যোগ শ্রীলংকার জনগণের মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শেষে জাহাজটি আগামী ১১ জুন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করবে বলেও আশা করছেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের যেকোনো দূর্যোগের মুহুর্তে বাংলাদেশ অতীতে বরাবরই এগিয়ে এসেছে। এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা দুই দেশের মধ্যকার পারস্পারিক সৌহার্দ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশা করা যায়।
পাশাপাশি এর মধ্য দিয়ে দূর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতাও প্রমাণিত হবে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দূর্যোগকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা বাংলাদেশের বলিষ্ঠ পররাষ্ট্রনীতিরই উজ্জ্বল প্রতিফলন।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু শ্রীলংকার ওপর দিয়ে ভারতের পূর্ব উপকূল হয়ে বাংলাদেশ ও মায়ানমারে আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্রীলংকা। এ সময় দেশটিতে বিগত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়। এর ফলে শ্রীলংকার ২৫টি জেলার মধ্যে ১৯টি জেলাই বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে।
অতিবৃষ্টিতে ভূমিধ্বসসহ আকষ্কিক বন্যায় শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে। এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন। টানা প্রবল বর্ষণে শ্রীলংকার বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি দেশটির মধ্যাঞ্চলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
শ্রীলংকার সরকারি পরিসংখ্যান মতে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধ্বসে দেশটিতে মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে গত ২৫ মে শ্রীলংকা সরকার আন্তর্জাাতিক সহায়তার আহ্বান করেন।
বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দূর্যোগের এই মুহুর্তে বাংলাদেশ সরকার শ্রীলংকার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ বঙ্গবন্ধু কলম্বিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
০১ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম