চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু খুন হওয়ার পর চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও অনেক প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশের তদন্ত।
মিতু সেদিন নির্ধারিত সময়ের আগে কেন ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন, পুলিশ এখনও সে মীমাংসা করতে পারেনি।
ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কালো রঙের যে মাইক্রোবাস পুলিশ আটক করেছে, তার চালককে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে মনে করা হলেও হত্যাকাণ্ডে সেও জড়িত কি না- সে প্রশ্নের উত্তর পুলিশ এখনও পায়নি।
বাবুল আক্তার জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে উগ্র জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলোকেই সন্দেহের তালিকার প্রথমে রেখে শুরু থেকে তদন্ত চালিয়ে আসছে পুলিশ। সেই তালিকা ছোট করে আনার কাজেও তেমন কোনো অগ্রগতির তথ্য পুলিশ দিতে পারেনি।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) দেবদাস ভট্টাচার্য্য বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশ সুপারের স্ত্রীর হত্যাকারীদের খুঁজতে পুলিশের সকল ইউনিট কাজ করছে। যথাযথ প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত স্পষ্ট কিছু বলা যাবে না।”
দুই বছর চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশে দায়িত্ব পালনকালে জঙ্গি দমন তৎপরতায় দক্ষতার জন্য প্রশংসিত বাবুলের স্ত্রী মিতু গত রোববার নগরীর জিইসি মোড় সংলগ্ন ওআর নিজাম রোডে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। সকালে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গেলে মোটরসাইকেলে আসা তিন যুবক কুপিয়ে ও গুলি করে তাকে হত্যা করে।
এ মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হত্যাকাণ্ডের পরপরই হত্যাকাণ্ডস্থল দিয়ে যাওয়া সন্দেহজনক মাইক্রোবাস ও এর চালক এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই দিন মিতু অন্যদিনের চেয়ে আগে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা দেবদাস।
তিনি বলেন, “আমরা বাবুল আক্তারসহ সবার সাথে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দেওয়ার জন্য মিতু প্রতিদিন সকাল ৭টায় বাসা থেকে বের হত।”
প্রতিদিন সকাল সোয়া ৭টায় ওই জায়গায় ছেলের বাস আসে জানিয়ে তিনি বলেন, “ উনি (মিতু) ৭টায় বাসা থেকে বের হতেন। ওইদিন কেন সাড়ে ৬টায় বের হয়েছেন তা আমরা খতিয়ে দেখছি।”
হত্যাকাণ্ডের পর মিতুর প্রতিবেশীরা জানিয়েছিলেন, অন্যদিনের তুলনায় তাড়াতাড়ি স্কুল বাস আসবে বার্তা দিয়ে ওই দিন তার মোবাইলে একটি এসএমএস এসেছিল।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এখনও মিতুর মোবাইল ফোনটি হাতে পাননি তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে মোবাইলের রেকর্ড ঘাটার তথ্য জানিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস বলেন, “ওই দিন তার (মিতু) মোবাইলে কোনো এসএমএস আসেনি।”
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মটরসাইকেলটি খুঁজে পাওয়ার পর পুলিশ বুধবার রাতে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস আটক করে, যে বাহনটিকে ঘটনার পরপরই ওই স্থান দিয়ে যেতে দেখা যায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজে।
দেবদাস ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, মাইক্রোবাসের চালক জানে আলমকেও আটক করা হয়েছে। তার বাড়ি সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে। জানে আলমই মাইক্রোবাসটির মালিক।
“মাইক্রোচালক বলেছে, ঘটনাটি সে দেখেছে। তারপর সে দ্রুত চলে গেছে।”
ওই গাড়িতে তখন কারা ছিলেন এবং গাড়িটির গতিবিধি সম্পর্কে জানে আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততা থাকলে তাকেও গ্রেপ্তার দেখানো হবে।”
উগ্র জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে-এ ধারণার ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত চলছে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা দেবদাস বলেন, “বাবুল আক্তার অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেরই আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রয়েছে। তাই সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এদিকে আগেরদিন হাটহাজারী থেকে গ্রেপ্তার সাবেক ছাত্র শিবিরকর্মী আবু নসুর গুন্নুকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য রোববার দিন রেখেছেন। এছাড়া আটক মটরসাইকেলের মালিক শহীদুল্লাহকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। -বিডিনিউজ
১০ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম