চট্টগ্রাম : পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন এতিম-অনাথ শিশুদের নিয়ে ইফতার করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদা মনের মানুষ খ্যাত মো. মনজুর আলম। নগরীর উত্তর কাট্টলীস্থ মোস্তফা হাকিম ভবনের নিজ বাড়িতে আয়োজন করা হয় ইফতারির।
প্রতিদিন বিকালে ২/৩ টি গাড়ী চলে যাবে স্থানীয় কোন এক এতিম খানায়। সেখান থেকে এতিম শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা হয় মোস্তফা হাকিম ভবনে।
নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এসব এতিম শিশুর বসার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ইফতার বিতরণ পর্যন্ত সবকিছু মনিটরিং করেন মো. মনজুর আলম। সঙ্গে উপস্থিত থাকেন তাঁর পাঁচ সন্তান মো. নিজামুল আলম, মো. সরোয়ার আলম, মো. ফারুক আজম, মো. সাইফুল আলম ও মো. সাহিদুল আলম।
এ কাজে বাবাকে সহায়তা করেন সন্তানরা। নিজেরা হাতে ধরে ইফতারির প্লেট বাড়িয়ে দেন আগত এসব এতিম শিশুর দিকে। প্রতিদিন বিকাল পাঁচটা থেকে চলে এই আয়োজন। আছরের পর আসতে শুরু করে বিভিন্ন এতিম খানা ও হেফজ খানার শিশু শিক্ষার্থীরা। কাতারবন্দি হয়ে সবাই যার যার স্থানে বসে সামনে ইফতারি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা হলেই শুরু হয় মিলাদ মাহফিলের। মিলাদ ও মুনাজাত শেষে সবাই একসঙ্গে ইফতারিতে অংশ নেন।
নগরীর দেওয়ান হাট আলহাজ ছমদু মিঞা এতিম খানা থেকে আগত শিশু শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন জানান, প্রতিদিন এতিম খানায় ইফতারি করি, তেমন কোন ভাল আইটেম থাকে না। রমজানের একটি দিন এখানে ইফতারি করতে এসে ভাল লাগছে। এসময় মনজুর আলম এতিম শিশুদের সঙ্গে আগত শিক্ষকদের কাছ এতিম খানায় কি দিয়ে ইফতারি করেন, সাহরিতে কি খান? এবিষয়ে জানতে চান।
এর পর তিনি নিজে প্রতিটি শিশুর কাছে তাঁদের নাম, পরিচয় শোনেন এবং ইফতারি পেয়েছে কিনা, কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা-এসব খোঁজ খবর নেন।
এ প্রসঙ্গে মনজুর আলমের মেঝ ছেলে মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মো. সরোয়ার আলম বলেন, এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করা আমাদের পরিবারের একটি ঐতিহ্য এবং পুরনো রেওয়াজ। তিনি বলেন, রমজান মাসে আমরা বিভিন্ন রসালো জিনিস দিয়ে ইফতার করি, যা এসব এতিম শিশুরা পায়না। তাঁর মরহুম দাদা আবদুল হাকিম কন্ট্রাক্টরও এ ভাবে এতিমদের নিয়ে ইফতার করতেন বলে জানান তিনি।
মনজুর আলম বলেন, নিজেরা তো ইফতারিতে কতকিছু খাই, কিন্তু এসব এতিম শিশুর খবরতো আমরা নেইনা। রমজানে এসব এতিম হাফেজ মানবেতর ভাবে ইফতারি করে। আমাদের ধনিদের সম্পদের উপর তাদের অধিকার রয়েছে। তাই অন্তত প্রতিটি রমজানে যদি এক একটি এতিম খানার শিশুদের সঙ্গে ইফতার করা যায় তাহলে তাদের কষ্টটা একটু হলেও উপলব্ধি করা যাবে।
এটি বহু বছরের পারিবারিক রীতি উল্লেখ করে মনজুর আলম বলেন, তাঁর পিতাও এতিমদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন ইফতারি করতেন। এতে করে তৃপ্তি অনুভব করা যায়।
এদিকে এতিম শিশু ছাড়াও মেয়র মঞ্জিলে প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক বিভিন্ন শ্রেণি পেশার রোজাদার ইফতারিতে অংশ নেন। মনজুর আলম বলেন, সারা দিন রোজা রেখে ইফতারির সময় নিজের সন্তান, নাতি, বাড়ীর কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক, ঈমাম, হাফেজ, সমাজ সেবক, পথচারী, পুলিশ, প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে একই ছাদের নীচে একসাথে ইফতার করি এতেই আনন্দ।
২১ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এমএম