বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬, ০৪:০৩:৩৪

খুনের জন্য সাত লাখ টাকার চুক্তি করে কে?

খুনের জন্য সাত লাখ টাকার চুক্তি করে কে?

শামীম হামিদ: পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার সমন্বয় বা পরিকল্পনাকারী ‘সোর্স’ কামরুল ইসলাম ওরফে মুসা সিকদারের অবস্থান নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তার পরিবারের দাবি, পুলিশ গত ১২ জুন মুসাকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে মুসার  সঙ্গে তাদের আর কোনো যোগাযোগ নেই। মুসা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে বলে তাদের দাবি। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিএমপির সহকারী কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মো. কামরুজ্জামান বলেছেন, ‘মুসা আমাদের হেফাজতে নেই। তবে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের অন্য কোনো ইউনিট তাকে হেফাজতে নিয়েছে কি না তা আমার জানা নেই।’ এদিকে পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের ভাষ্যমতে, রবিবার রাত থেকেই সিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে মুসা আটকের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। মুসাকে ইতোমধ্যে গুম করা হয়েছে বলে কর্মকর্তাদের একটি অংশ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। অপর অংশের ধারণা, মুসাকে পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রকাশ্যে আনা হবে।

অন্যদিকে দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ার গত সোমবার আদালতে জবানবন্দিতে মুসাকে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী বলে দাবি করলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মুসা আসলে ছিল মধ্যস্থতাকারী। তাকে অন্য কেউ মিতুকে হত্যার কাজটি কন্ট্রাক্ট দিয়েছিল। সেই অর্থে মুসা একজন কন্ট্রাক্ট কিলার। এজন্য তাকে সাত লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে দুই লাখ টাকা অগ্রিমও দেয়া হয়। মুসার দায়িত্ব ছিল পুরো হত্যাকাণ্ডের নিখুঁত একটি ছক তৈরি করে মিতুকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া। কথা ছিল আসল নির্দেশদাতার পরিচয় কোনো মতেই প্রকাশ করা যাবে না। মিতুকে হত্যার জন্য কে মুসাকে টাকা দিতে পারেন, তা এখন অনেকটাই ‘ওপেন সিক্রেট’। খোদ সিএমপির অনেকেই বিষয়টি কমবেশি জানেন। তবে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মিতু হত্যা মামলা নিয়ে পুলিশ খুবই দোটানায় পড়েছে। কারণ এটি এমনই এক রহস্য যা উদঘাটন হলে পুলিশ বিভাগে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। আবার মূল হোতাকে আইনের আওতায় আনতে না পারলে পুলিশের ইমেজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা এবং সামপ্রতিক তনু হত্যার মতো মিতু হত্যা মামলার ভবিষ্যত্ নিয়েও সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। সহযোগীসহ অস্ত্রের জোগানদাতা গ্রেফতার এদিকে মিতু হত্যায় অস্ত্রের জোগানদাতা এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ভোলাইয়াকে তার সহযোগী মনির হোসেন মনিরসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, ভোলাও বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত সোর্স। গত সোমবার রাত তিনটার দিকে নগরীর বাকলিয়া থানার রাজাখালী থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি স্থানীয়ভাবে তৈরি পয়েন্ট থ্রি টু বোরের রিভলবার ও এর ৬টি গুলি, একটি ম্যাগাজিন এবং একটি সেভেন পয়েন্ট সিক্সটি ফাইভ বোর বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। ভোলার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র আইন, জননিরাপত্তা আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে অস্ত্র আইনে সে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত। এছাড়া কয়েকটি মামলায় বিচারাধীন আসামি। কিছু মামলায় সে জামিনে রয়েছে। অন্যদিকে মনির বাকলিয়া রাজাখালী এলাকায় এক রিকশা গ্যারেজের মালিক এবং ভোলার সহযোগী।  

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ভোলাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে মিতু হত্যায় ব্যবহূত অস্ত্রগুলো সরবরাহ করেছিল বলে স্বীকার করেছে। অস্ত্রগুলো সে ওয়াসিম ও আনোয়ারকে দিয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের দিন অর্থাত্ ৫ জুন সকাল আনুমানিক ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে খুনিরা অস্ত্রগুলো পুনরায় ভোলার কাছে ফেরত দেয়। পুলিশি অভিযানের ভয়ে ভোলা তার বিশ্বস্ত সহযোগী মনিরের কাছে অস্ত্রগুলো জমা রাখে। অস্ত্রগুলো পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। ভোলাইয়া ও মনিরকে গতকাল বিকালে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট (পঞ্চম আদালত) নাজমুল হোসেন চৌধুরীর আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। বিচারক এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হবে উল্লেখ করে দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ দিকে মুসা সিকদারের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, মুসাকে চট্টগ্রাম শহরের কালামিয়া বাজার এলাকার বাসা থেকে পুলিশ আটক করে। তারা জানান, গত ১২ জুন রাতে পুলিশ রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়নের মধ্য রাজানগর গ্রামে মুসার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভাই সাইদুল ইসলাম সিকদার, মাহবুব সিকদার ও আমিন সিকদারকে আটক করে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে পুলিশ মুসার শহরের বাসায় অভিযান চালায়। বাসা থেকে স্ত্রী পান্না আক্তারকেও আটক করে এবং পরদিন কৌশলে মুসাকে গ্রেফতার করে। কয়েকদিন আটক রাখার পর অন্যদের মুক্তি দেওয়া হলেও মুসা এবং তার বড় ভাই সাইদুল ইসলাম সিকদারকে আটক করে রাখে। জানা গেছে, মুসার স্ত্রী পান্না আকতার এখন বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করছেন। তার ভাই-বোনেরাও মুসা সিকদারের ব্যাপারে মুখ খুলতে চান না। তবে বোন জন্নাতুল ফেরদৌস ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজন নিশ্চিত করে বলেন, মুসাকে পুলিশই ধরে নিয়ে গেছে।-ইত্তেফাক

২৯জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে