নিউজ ডেস্ক: আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম থেকে ছাড়পত্র নেন ২ জুন বৃহস্পতিবার। পরের দুই দিন শুক্রবার ও শনিবার ছিল সরকারি ছুটি। স্বাভাবিক ভাবেই এই দুই দিন পুলিশ সদর দপ্তরও বন্ধ ছিল। ফলে ৫ জুন রবিবার পুলিশ সদরে তার যোগ দেওয়ার কথা। কিন্তু ৪ জুন শনিবার ছুটির দিনেই অফিস খুলিয়ে যোগদানপত্র জমা দেন বাবুল আক্তার। এর পরদিন ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামে খুন হন তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এখন প্রশ্ন উঠেছে ছুটির দিনে তড়িঘড়ি করে কেন তাকে যোগদান করতে হল। এর পেছনে রহস্যই বা কি? ছুটির দিনে কাজে যোগদানের ব্যাপারে তার কোন বাধ্যবাধকতাও ছিল না বলে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, এই ধরনের তথ্য জানান পর তারা ফাইল নিয়ে পর্যালোচনা করে এর সত্যতা পেয়েছেন। পাশাপাশি সদর দফতরের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করেও একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়।
ফুটেজে দেখা যায়, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাবুল আক্তার পুলিশ সদর দফতরে যান। ওই দিন পুলিশ সদরের অধিকাংশ অফিসই বন্ধ ছিল। বিশেষ প্রয়োজনে দু’একজন কর্মকর্তা অফিসে এসেছিলেন। তাদের সঙ্গেই আড্ডা দিয়ে দীর্ঘ সময় পার করেন বাবুল আক্তার। পরে বেলা দেড়টার দিকে এক ডিআইজির অফিস খুলে তার যোগদানপত্র জমা নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছুটির দিন ৪ জুন তিনি পুলিশ সদরে যোগ দিলেন। আর ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামে তার স্ত্রী খুন হল। এখন তার এই তড়িঘড়ি যোগদান নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। কেন তিনি ছুটির দিনে যোগ দিলেন- এ প্রশ্নের জবাব এখন তিনিই দিতে পারেন। এ বিষয়টা অনেকের মধ্যেই সন্দেহের সৃষ্টি করেছে বলে বাবুলের এক সহকর্মী জানান।
মন্ত্রণালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক: এদিকে মিতু হত্যা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। যদিও রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকটি ছিল একেবারেই অনানুষ্ঠানিক। এই বৈঠকে বাবুল আক্তারের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে বৈঠকে অংশ নেয়া কোন কর্মকর্তাই কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। একজন কর্মকর্তা শুধু বলেছেন, বৈঠকে বাবুলের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কি হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। অপর একটি সূত্র জানান, শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ না করে বাবুলকে চাকরিতে রেখে দেওয়ার ব্যাপারে তার সহকর্মীদের একটি গ্রুপ চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি তাকে যেন ‘জেলেও যেতে না হয়’ সে ব্যাপারেও তাদের তত্পরতা চলছে। বাবুল আক্তারের পক্ষে সরকারের শীর্ষ মহলকে বোঝানোর ব্যাপারেও চেষ্টা করছেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে মাহমুদা খানম মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী এসপি বাবুল আক্তার তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। খুনে জড়িত আরো পাঁচজন পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে এ ঘটনায় বাবুল আক্তারকে ১৫ ঘন্টা নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করলেও খুনের মূল নির্দেশদাতার পরিচয় এখনো জানা যায়নি।-ইত্তেফাক
১ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ