মুহাম্মদ সেলিম: পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় পুলিশি খাতায় ‘পলাতক’ আসামি কামরুল ইসলাম ওরফে মুছা সিকদারকে নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া খুনিদের ভাড়ায় নিয়োজিত করা মুছা সিকদারকে পুলিশ ‘আটক’ করেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তবে মুছার পরিবারের এ দাবি নাকচ করে পুলিশ জানিয়েছে, মুছাকে গ্রেফতার করা গেলে এ মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পুলিশ ও মুছার স্বজনদের পাল্টাপাল্টি দাবির মধ্যেই মুছা কোথায়, তাকে কোন পরিণতি বরণ করতে হয়েছে এমন অনেক প্রশ্ন নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। ‘পলাতক’ মুছার স্ত্রী পান্না আকতার বলেন, ‘২২ জুন নগরীর বন্দর থানা এলাকা থেকে সাদা পোশাকের আটজন পুলিশ এসে মুছাকে তুলে নিয়ে গেছে। তখন থেকে তার কোনো খোঁজ নেই। সে যদি অপরাধী হয়, তাহলে তাকে আদালতে তোলা হোক। বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ এখন তা অস্বীকার করছে। আমি আমার স্বামীকে জীবিত দেখতে চাই।’
পান্না আকতার সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সবাই বলছে উপরের একজনের নির্দেশে মুছা বাবুল আক্তার স্যারের স্ত্রীকে খুন করেছে। তাকে গ্রেফতার করা গেলে নির্দেশদাতার নাম বের হবে। এখন পুলিশ প্রশাসন মুছাকে গুম করে কাকে রক্ষা করতে চাইছে?’ মুছাকে আটক করার কথা অস্বীকার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, মুছাকে গ্রেফতার করা গেলে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে। সে এ মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ আসামি। তাকে গ্রেফতারে আপ্রাণ চেষ্টা করছে পুলিশ। জানা যায়, মিতু খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া প্রত্যেক আসামি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন মুছা তাদের ভাড়া করেছেন। মিতু খুনে ব্যবহার করা অস্ত্র দুটির সরবরাহকারী এহতেশাম হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাও স্বীকার করেছেন অস্ত্র ভাড়া করেছেন মুছা। খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আনোয়ার হোসেন ও মো. ওয়াসিম খুনের জন্য মুছা তাদের ভাড়া করার কথা উল্লেখ করেন।
তদন্তসংশ্লিষ্টদের দাবি, মুছাকে গ্রেফতার করা গেলে উন্মোচিত হবে এ হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র দাবি করেছে, পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’ থাকা সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া মুছা সিকদার, মো. রাশেদ ওরফে ভাগ্নে রাশেদ এবং আবদুল নবী পুলিশি হেফাজতেই রয়েছেন। ২৪ জুন চারজনকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের বাবুল আক্তারের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। মুছার স্ত্রী পান্না আকতার বলেন, ‘আমরা জেনেছি, মুছাসহ চারজনকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বাবুল আক্তারের মুখোমুখি করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম ফেরত নিয়ে আসা হলেও মুছাকে ঢাকায় রেখে দেওয়া হয়েছে। এখন কেউ বলছে মুছাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেউ বলছে গুম করেছে। আসলে আমরা জানি না মুছার ভাগ্যে কী ঘটেছে।’ সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘সব আসামিকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ মামলার সঠিক তদন্ত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার ২ : এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া মোহাম্মদ শাহজাহান ও সাইফুল ইসলাম সাকু। সাকু মিতু হত্যার জন্য খুনি ভাড়া করা মুছা সিকদারের বড় ভাই। তিনিই মিতু হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহার করা মোটরসাইকেল খুনিদের সরবরাহ করেছেন। পুলিশের দাবি, গতকাল সকালে নগরী এবং রাঙ্গুনিয়ায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সকালে রাঙ্গুনিয়ায় অভিযান চালিয়ে সাকুকে এবং নগরী থেকে শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে শাহজাহান কিলিং মিশনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং সাকু মোটরসাইকেল সরবরাহ করেন।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। গতকাল বিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হলে ঈদের পর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করা হবে বলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
প্রসঙ্গত, ৫ জুন নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে।-বিডি প্রতিদিন
২ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ