শামীম হামিদ: ঢাকার গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার মতো চট্টগ্রামে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি)। এজন্য তারা বেছে নেয় অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড এলাকা। গত রবিবার আটক এবিটির চার সদস্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার তাদের আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সীতাকুণ্ড এলাকায় অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে প্রচুর বিদেশি নাগরিক কাজ করেন; যারা বর্তমানে জঙ্গি হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু। এছাড়া এখানে চন্দ্রনাথ ধামসহ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা রয়েছে; যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রাচীন ও পবিত্র তীর্থস্থান। এসব স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা।
জানা গেছে, ঈদের পরপরই হামলার টার্গেট নিয়ে সীতাকুণ্ড এলাকায় সংগঠিত হচ্ছিল এবিটির ৮/৯ জন সদস্য। নেতৃত্বে ছিল আবদুল্লাহ নামে একজন। দলে ছিল পিকলু দাশ (২৫) নামে আরো একজন, যে জঙ্গি হওয়ার জন্য দুই বছর আগে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে। ধর্মান্তরিত হয়ে নাম ধারণ করে মুসয়াব ইবনে উমায়ের। গত রবিবার সীতাকুণ্ড এলাকা থেকে পিকলু দাশসহ এবিটির চার সদস্যকে পুলিশ আটক করে। তবে পালিয়ে যায় আবদুল্লাহ। আটক বাকি তিনজন হলো মো. খোরশেদুল আলম (৩২), ফয়সাল হোসেন শিপন (২৪) ও রাসেল মোহাম্মদ ইসলাম (৪০)।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে সীতাকুণ্ড অঞ্চলে বিভিন্ন কলকারখানায় হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিল। বড় টার্গেট ছিল বিদেশিরা। আর অপরাধ করে মহাসড়ক দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে তারা স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তা নিয়ে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে জড়ো হয়েছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খুব শিগগিরই চট্টগ্রামে এ হামলার ছক কষছিল জঙ্গিরা। তারা যদি গ্রেফতার না হত তাহলে চট্টগ্রামে খুব শিগগিরই বড় ধরনের হামলা হতে পারত। কিন্তু তাদের সব পরিকল্পনা নস্যাত্ হয়েছে।
পুলিশ জানায়, আটকদের মধ্যে পিকলুর বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। খোরশেদের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায়, রাসেলের সীতাকুণ্ড উপজেলায় এবং শিপনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। পুলিশ তাদের কাছ থেকে চারটি চাপাতি, চারটি কিরিচ, ছয়টি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও একটি ট্যাব এবং সরকারবিরোধী কাগজপত্র উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রের মতোই। আটক চার জঙ্গি স্বীকার করেছে যে, তারা টার্গেট করা ব্যক্তিকে কুপিয়ে মারার জন্য এসব চাপাতি সংগ্রহ করেছিল।
চট্টগ্রামের এসপি একেএম হাফিজ আক্তার জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আগে থেকেই ওই চারজনের গতিবিধি নজরদারি করা হচ্ছিল। পুলিশ সময়মত সক্রিয় হওয়ায় জঙ্গিদের নাশকতার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য এবং জসিম উদ্দিন রাহমানির অনুসারী বলে জানিয়েছে। তাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা রয়েছে কী না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পাঁচ দিনের রিমান্ডে: সীতাকুণ্ডে গ্রেফতার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সন্দেহভাজন ওই চার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। সীতাকুণ্ড থানায় দায়ের হওয়া সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় গতকাল চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিচারিক হাকিম আ.স.ম শহিদুল্লাহ কায়সার এই অনুমতি দেন।
হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে জঙ্গি দলে: আটকদের মধ্যে মুসয়াব ইবনে উমায়ের (পিকলু দাশ) দুই বছর আগে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগ দেয়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) রেজাউল মাসুদ জানান, মুসয়াব আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বায়তুল মাল সম্পাদক। তার বাড়ি পটিয়া উপজেলার ছনহরা গ্রামে। বর্তমানে সে সিইপিজেডে ইয়ংওয়ান গার্মেন্টসে কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর সে পরিবারের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন করে।-ইত্তেফাক
১৩ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ